অভিযোগ খুবই গুরুতর। এবং সিদ্ধান্তটি বেশ নাটকীয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার খবর অনুসারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহাবুবুল মতিনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করা হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি উপাচার্য বরাবর যৌন হয়রানি, যৌন নিপীড়ন এবং ধর্ষণ চেষ্টার জন্য লিখিতভাবে অভিযোগ করেন একই বিভাগের এবং ওই অভিযুক্ত শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে স্নাতকোত্তর থিসিস করা এক ছাত্রী।
প্রশ্ন আসতে পারে যে এতো তাড়াতাড়ি এই অধ্যাপককে একেবারে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হল কীভাবে এবং কেন? মাত্র ১৬ দিনের মাথায় এরকম একটি কঠিন সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আসলেন কীভাবে? আমি নিশ্চিত ড. মাহবুবুল মতিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোর্টে যাবেন। নিকট অতীত বিশ্লেষণ করে তিনি আশা করতে পারেন যে তার এই বহিষ্কারাদেশ কোর্টে হয়তো টিকবে না। হয়তো এই অধ্যাপক সগৌরবে আবার ফিরে আসবেন। অতীতে অনেকেই ফিরে এসেছেন। তিনিও হয়তো ফিরে আসবেন। নিরাশ হবেন না মাননীয় অধ্যাপক! শেষমেশ হয়তো আপনি জয়ী হয়ে ফিরে আসবেন।
মাঝখান দিয়ে কিন্তু মেয়েটার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ছেয়ে গেল!
তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম যে ড. মাহবুবুল মতিনকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ১০০ ভাগ আইন মেনেই বহিষ্কার করেছে। তাহলে কি ঘটনার এখানেই সমাপ্তি? যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণ প্রচেষ্টার জন্য দেশের প্রচলিত আইনে ওনার কোন বিচার হবে না? উনার বিরুদ্ধে থানায় কোন মামলা দায়ের করা হবে না? পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেবেনা? এরকম অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করবে না? চার্জশিট দেবেনা? রিমান্ডে নেবে না? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই অধ্যাপককে বহিষ্কারাদেশের সঙ্গে তার বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কোন অনুরোধ বা আদেশ নেই। অপরাধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট অধ্যাপকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার ফৌজদারী অপরাধের বিচার করবে কে? নাকি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক হবার কারণে তার ফৌজদারী অপরাধ গৌণ হয়ে গেছে? সরকারি চাকরি করলেই কি পুলিশ আদালতের ভয় চলে যায়? শুধুমাত্র বিভাগীয় ব্যবস্থা? পুলিশ-আইন-আদালত কি শুধুমাত্র ফকির মিসকিনদের জন্য?
কিন্তু আমাদের তো এগোতে হবে। আমরা দেখতে চাই যে দেশের সকল নাগরিকের জন্য আইন একইভাবে প্রযোজ্য।আমাদের ছেলেমেয়েরা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে শিক্ষা গ্রহণের জন্য। সহপাঠী বা শিক্ষকদের দ্বারা যৌন নির্যাতন ধর্ষিতা হবার জন্য নয়। এরপরেও কিছু দুর্ঘটনা ঘটবেই। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে হয়তো সরাসরি দায়ী করা যাবে না। কিন্তু অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পরেও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি পুলিশকে তার দায়িত্ব পালনের জন্য আহবান না করেন, তাহলে দায়ী কে? তাহলে কি ক্রিমিনাল আইন স্থান-কাল-পাত্র ভেদে গতি হারিয়ে ফেলে? সরকারি চাকরি করলেই কি দেশের আইন আদালতকে তোয়াক্কা না করলেও চলে?
গত সপ্তাহে পিজি হাসপাতালের দুই অধ্যাপক একই ধারার অভিযোগে শিরোনাম হয়েছিলেন। এক সরকারি অধ্যাপিকা আরেক বিভাগের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণের মামলা করেছিলেন। থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছিলেন যে অধ্যাপক সাহেবকে গ্রেফতারের জন্য জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। তারপর আর কোন সংবাদ নেই। হয়তো সংক্ষুব্ধ মহিলা ডাক্তার শান্ত হয়েছেন। তাই পুলিশ আর সামনে এগোচ্ছে না।
তাড়াতাড়ি বহিষ্কারাদেশ দেওয়ার অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে যে অভিযোগ দায়ের করার পর থেকে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের বহিষ্কার ও যথাযথ বিচার চেয়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এই আন্দোলন না হলে মহামান্য এ অধ্যাপকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের ব্যবস্থা নিতেন তা পাঠকরা ধারণা করতে পারেন।