এহেন সুবিধাভোগীদের একজন সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতিউর রহমান।
ছাত্র জনতার আন্দোলনে পতন ঘটেছে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের। দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন তিনি। তার আকস্মিক পালিয়ে যাওয়ার বিপদজনক অবস্থায় পড়েছেন দলদাস নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অবৈধ সুবিধাভোগীরা।
নগরীর কালিঘাটস্থ এক চাউল দোকানের কর্মচারী ছিলেন এই মতিউর। কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকারের সময় শূণ্য থেকে কয়েকশ:কোটি টাকার মালিক হয়ে যান এই মতিউর।এনিয়ে নিজ ওয়ার্ত এলাকায় রয়েছে ব্যাপক গুঞ্জন।
সিলেট-৩ আসনের দুই বারের আওয়ামী এমপি (বর্তমানে আত্মগোপনে থাকা) হাবিবুর রহমান হাবিবের একান্ত ঘনিষ্টজন মতিউর। নির্বাচন সহ বিভিন্ন খাতে হাবিবকে অর্থযোগান দিয়ে রাতারাতি আলোচনায় চলে আসেন এই মতিউর।
সে কারণে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সাথে দুরত্ব সৃষ্টি হলেও এমপি হাবিবের কল্যানে সিলেট মহানগরের ৪২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহবায়ক নির্বাচিত হন মতিউর।
কিন্তু স্থানীয় আওয়ামীলীগের প্রতিবাদের মুখে সেই ঘোষনা স্থগিত করে মহানগর আ’লীগ। তাই বলে থেমে যাননি মতিউর। পরবর্তীতে সিসিকের নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেন তিনি।
ওয়ার্ডের বাঘা বাঘা আওয়ামীলীগ রাজনীতির শক্ত প্রার্থীদের পরাজিত করে ভোটের আগেই বিজয় নিশ্চিত করেন তিনি। কারণ টাকার খেলা, সেই সাথে স্থানীয় এমপি হাবিবের ঘনিষ্ট লোক তিনি। ইলেকশন ইনঞ্জিনিয়ারিং সুবিধায় পড়ে যান এমপি হাবিবের বিশেষ নজরে।
এক পযার্য়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ওয়ার্ডের শ্রীরামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রের আহবায়ক হন মতিউর। সেই পদে পাত্তা পাননি স্থানীয় প্রবীন আ’লীগ নেতারা। সেই কেন্দ্রের নির্বাচনী খরচ তিনি নিজে বহন করে আরেক দফা এমপির আপনজনের তকমা গায়ে মাখেন।
তবে টিআর সহ বিভিন্ন খাতের দেখভাল ছিল তার হাতে। কারণ তিনি ধান চাউল ব্যবসায়ী। ভারতীয় চোরাই চিনির ব্যবসায় তার কোটি কোটি টাকার লগ্নি রয়েছে, এমপির প্রভাবে থানা পুলিশ তার প্রতি ছিল অতি দূর্বল।
সেকারণে ভারতীয় ট্রাক ট্রাক চিনি, তার নিজ ওয়ার্ডের তৈয়বকামালের ব্যবসা প্রতিষ্টানে নিয়ে আসতেন মতিউর। তারপর পাঠিয়ে দিতেন দেশের বিভিন্ন স্থানে।
আওয়ামীলীগের ব্যনারে প্রশাসন সহ এলাকায় নিজের প্রভাব শক্তিশালী করতে সাম্প্রতিক বন্যাকালে গত ২৪ জুন বেলা ১১ টায় তার ওয়ার্ডে নিয়ে আসেন বস্ত্র ও পাঠমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানককে। বিশাল অনুষ্টান করেন মতিউর। আয়োজন সহ ত্রানের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করেন তিনি নিজে।
এছাড়া মন্ত্রীসহ তার সফর সঙ্গীদের নানা উপহার দেন কাউন্সিলর মতিউর রহমান।
আওয়ামী একনায়ক সরকার পতনের পর এখন নতুন মিশনে নেমেছেন কাউন্সিলর মতিউর। এমপি হাবিবের অবর্তমানে নতুন গডফাদার খুঁজছেন বলে স্থানীদের মধ্যে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। সেকারণে গোপনে তৎপরতাও নাকি চালাচ্ছেন।
ইতিমধ্যে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে মুছে ফেলেছেন আওয়ামীলীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামে নিজের অংশগ্রহন সহ মেয়র এমপি মন্ত্রী এমনকি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে গণভবনে কাউন্সিলর শপথের ছবিটিও।
তবে এখনো রয়েছে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সাধারন নির্বাচনে টিউলিপ সিদ্দিকী বিজয়ী হওয়ার পর তার অভিনন্দন সম্বলিত পোস্টটি।
সরকার পতনের পর গত ৭ আগস্ট অতি কৌশলে হাজির হন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) এক বৈঠকে। সেখানে চলমান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কর্মসূচীতে নিজের চেহারা দেখাতে ফটোসেশনেও অংশ নেন তিনি।
মতিউরের এহেন নতুন অবয়ব নিয়েও শুধু হয়েছে তোলপাড়। অনেকে তাকে বলেছেন, মেয়র সহ সিসিকের সব আওয়ামীলীগ রাজনীতির কাউন্সিলরা পলাতক, সেখানে কোন সাহসে আসলেন তিনি। মৃদু হেসে বলেছেন, আমি আমার ওয়ার্ডের বিএনপি জামাতের লোকদের ম্যানেজ করেছি, সমস্যা নেই। এদিকে, কাউন্সলর মতিউরের অন্যায় অপরাধ জুলুম অত্যাচারের বিভিন্ন তথ্য গণমাধ্যমে পাঠাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন।
সূত্র-সিলেট পোস্ট