• ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ২৮শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

আখালিয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে এসএমপি কমিশনার ঘটনা নিয়ে যা বললেন

risingsylhet.com
প্রকাশিত আগস্ট ৭, ২০২৩
আখালিয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে এসএমপি কমিশনার ঘটনা নিয়ে যা বললেন

আখালিয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে এসএমপি কমিশনার ঘটনা নিয়ে যা বললেন

আখালিয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে এসএমপি কমিশনার ঘটনা নিয়ে যা বললেন,

সোমবার (৭ আগস্ট) দুপুর দেড়টার সিলেট মহানগরের আখালিয়া এলাকার ধানুহাটারপাড়স্থ আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ পরিদর্শন করেছেন মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার মো. ইলিয়াছ শরীফ (বিপিএম-বার, পিপিএম)। এসময় সঙ্গে ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে এসএমপি কমিশনার বলেন- পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। যাদেরকে আটক করা হয়েছে তারা ছাত্রজীবনে শিবিরের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. ইলিয়াছ শরীফ বলেন- ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করে যারা ঘটনাকে উস্কে দিছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে রবিবার রাত ১০টার দিকে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে পবিত্র কুরআন পুড়ানোর অভিযোগ উঠে।

রবিবার (৬ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে হঠাৎ উত্তাল হয়ে পড়ে সিলেট মহানগরের আখালিয়া এলাকা। আখালিয়ার ধানুহাটারপাড়স্থ আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান ও এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে পবিত্র কুরআন শরিফ পুড়ানোর অভিযোগ তুলে তাদের দুজনকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মারধর করেন স্থানীয় জনতা। এসময় তারা দুজন অনেকগুলো পবিত্র কুরআন পুড়িয়েছেন- এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে শত শত মানুষ উত্তেজিত হয়ে আইডিয়াল স্কুলের ফটকে জড়ো হয়ে তাদের পিটিয়ে ও পুড়িয়ে মারার হুমকি দিতে থাকেন।

খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান ও ওই শিক্ষককে প্রতিষ্ঠানটির একটি কক্ষে আটকে করে ক্ষুব্দ জনতার হাত থেকে রক্ষা করে। এসময় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।
আটক দুজরে মধ্যে একজন হলেন- সিলেট মহানগরের আখালিয়ার ধানুহাটারপাড়স্থ আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল ও চেয়ারম্যান নুরুর রহমান (৫০)। তিনি সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের মৃত ফজুর রহমানের ছেলে। বর্তমানে তিনি কোতোয়ালি থানাধীন আখালিয়া তপুবন এলাকার সরু মিয়ার বাসায় বসবাস করছেন।

আটক অপরজন হলেন- ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানাধীন বাউলাপাড়া এলাকার ইদ্রিস আলীর ছেলে মাহবুব আলম (৪৫)। তিনি বর্তমানে কোতোয়ালি থানাধীন আখালিয়া ধানুহাটারপাড় এলাকায় বসবাস করছেন।

সময় যত বাড়তে থাকে পরিস্থিতি তত উত্তপ্ত হয়। রাত ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের বিশেষ টিম সিআরটি এবং জালালাবাদ ও কোতোয়ালি থানার অতিরিক্ত পুলিশ এবং র‍্যাব-৯ ঘটনাস্থলে পৌঁছে।

এসময় উত্তেজিনত জনতার একাংশ সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

রাত সাড়ে ১২টার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাধ্য হয়ে ফাঁকা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। পরে ধীরে ধীরে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন উত্তেজিত স্থানীয় জনতা। রাত ২টার দিকে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে পুলিশ। এসময় অভিযুক্ত দুজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে- রবিবার বিকালে সিলেটের জালালাবাদ থানাধীন ফতেহপুর মাদ্রাসার শিক্ষক ইসহাক আহমদ এক কার্টুন ও এক বস্তা ভর্তি কোরআন শরিফ দিয়ে যান নুরুর রহমানের কাছে। এসময় তিন কার্টুনের কোরআন শরিফ ছাত্রদের মাঝে বিতরণ ও বস্তার কুরআন শরিফ পুড়িয়ে ফেলতে বলেন।

রবিবার রাত ১০টার দিকে নুরুর রহমান ও মাহবুব আলম বস্তার ৪৫টি কোরআন শরিফ কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে শুরু করেন। এসময় স্থানীয় লোকজন দেখে ফেলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং এ দুজনকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ ওই এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং জনতার হাত থেকে নুর ও মাহবুবকে উদ্ধার করে। এসময় উত্তেজিত জনতা পুলিশের দিকে ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকেন। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয় এসময়। আহত পুলিশ সদস্যদেররা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও শর্টগান ব্যবহার করে পুলিশ। পরে রাত ২টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোতোয়ালি থান, জালালাবাদ থানা, সিআরটি ও গোয়েন্দা পুলিশের ৫ শতাধিক সদস কাজ করেন। এছাড়া পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব-৯ এর একটি টিমও কাজ করে।

পুলিশ আরও জানায়, অভিযুক্ত নুরুর রহমান ও মাহবুব আলম ছাত্রজীবনে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। নুরুর রহমান কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন। তিনি বর্তমানে জৈন্তাপুর মাদ্রাসা সিলেটে ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক। পাশাপাশি আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

নুরুর রহমানকে বস্তায় করে কুরআন শরিফ দেওয়া ইসহাক সিলেট বেতারের ক্বারি ও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের খন্ডকালীন শিক্ষক বলে জানিয়েছে পুলিশ।

১৫ বার পড়া হয়েছে।