মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে করেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ফোরাম ।
আচরণবিধি ভঙ্গ করে যেসব বিচারকরা সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে জামিন যোগ্য মামলায় জামিন না দিয়ে নিষ্পাপ মানুষকে কারাগারে পাঠিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানিয়েছে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ফোরাম।
সংবাদ সম্মেলনে তারা এমন দাবি জানিয়েছেন।
এ সময় দেশের বিচার বিভাগ পুনর্গঠন ও সংস্কার করতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ফোরামের পক্ষ থেকে ১২ দফা প্রস্তাবও তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে নরসিংদীর সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ফিরোজ আলম বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চলা অসহনীয় নিপীড়নের অবসান ও ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসকের বিদায় হয়েছে। এখন বিচার বিভাগকেও ঢেলে সাজানো দরকার। আমরা অবসরপ্রাপ্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা বিচার বিভাগ সংস্কার ও পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বেশকিছু প্রস্তাব দিচ্ছি।
সেগুলো হচ্ছে-
১. বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত ও দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনের সংশোধন আনতে হবে।
২. বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচারকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
৩. বিচারকদের নিয়োগ, পদোন্নতিসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে নীতিমালা করার জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় গঠন করতে হবে।
৪. মাসদার হোসেনের মামলায় প্রদত্ত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫. বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করতে হবে।
৬. যে সকল বিচারকরা আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে তাদের ন্যায় বিচারের পরিপন্থী কাজ করেছেন, জামিন যোগ্য মামলায় জামিন না দিয়ে নিষ্পাপ মানুষকে কারাগারে পাঠিয়েছেন, রিমান্ড আদেশ দিয়ে হয়রানি ও নির্যাতনের সুযোগ করে দিয়েছেন, ফরমায়েশি রায় দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য প্রকাশ্যে সরকারকে সমর্থন করে যারা কাজ করেছে তাদের বদলি করে সৎ ও নিরপেক্ষ বিচারকদের পদায়ন করতে হবে।
৮. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ সকল বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের এবং আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত স্বৈরাচারী সরকারের সহযোগীদের অপসারণ করতে হবে।
৯. চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা সকল বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ বাতিল করে যোগ্য ও নিরপেক্ষ অবসর প্রাপ্ত বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে।
১০. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত বিচারপতিদের মধ্যে যারা শপথ ভঙ্গ করে এবং আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে সরকারকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
১১. ভবিষ্যৎ স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতা বিলুপ্তির জন্য এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংবিধানের সংস্করণ করতে হবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. মাসদার হোসেন, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. আবু হোসেন খান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক আবুল হোসেন খন্দকার, আব্দুর রহমান, মোস্তাক আহমেদ এবং স. ম. আব্দুর রব।
একইসাথে বর্তমান সরকার যদি অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের প্রতি কোনো দায়িত্ব দেন তবে তারা দায়িত্ব আন্তরিকতার পালন করতে সম্মত আছেন বলেও মন্তব্য করেন সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ফিরোজ আলম।