রাইজিংসিলেট- আরও চাপে মমতা… রাজ্যসভার সাংসদ পদ ছাড়লেন জহর সরকার। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে মনোনীত রাজ্যসভার সাংসদ পদ ছাড়লেন জহর সরকার। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) এবিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে রাজ্যসভার সাংসদ পদ ও রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে সুর চড়িয়ে এর আগে দলের অস্বস্তি বাড়িয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় ও সাবেক রাজ্যসভার সংসদ ডাক্তার শান্তনু সেন। কিন্তু এই প্রথম শাসকদলের কোনো সাংসদ পদত্যাগ করলেন।
মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা ২ পাতার চিঠিতে একাধিক সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন জহর সরকার। মমতাকে লেখা চিঠিতে জহর লিখেছেন, ‘আমি অনেক চিন্তা ভাবনার পর স্থির করেছি সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করব এবং রাজনীতি থেকে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হব। আমার কখনও কোনো দলীয় পদ বা অন্য কিছুর উচ্চাশা ছিল না। আমি মোদদি সরকারের স্বৈরাচারী, বিভেদমূলক, বৈষম্যমূলক ও গণতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপ ও নীতির স্বার্থহীন ও সুতীব্র সমালোচনা করতে পেরেছি এটাই আমার সন্তুষ্টির কারণ। কিন্তু সংসদে নির্বাচিত হবার এক বছর পার, যখন ২০২২ সালে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর চূড়ান্ত দুর্নীতির খোলাখুলি প্রমাণ দেখে, প্রকাশ্যে মতামত দিই যে দল ও সরকারের এই ব্যাপারে অত্যন্ত সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন, তখন দলের আনেক বর্ষীয়ান নেতা আমাকে হেনস্থা করেন। তখন আমি পদত্যাগ করা থেকে বিরত ছিলাম এই আশা নিয়ে যে আপনি ‘কাট মানি ও আর্থিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক বছর আগে যে আন্দোলন আরম্ভ করছিলেন, তা চালিয়ে যাবেন।’
এরপরই জহর সরকার আরজি কর প্রসঙ্গ তুলে লিখেন, গত একমাস ধৈর্য ধরে আরজি কর হাসপাতালের ঘৃণ্য ঘটনার বিরুদ্ধে সবার প্রতিক্রিয়া দেখেছি আর ভেবেছি আপনি কেন সেই পুরোনো মমতা ব্যানার্জির মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সরাসরি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলছেন না। এখন সরকার যে সব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে তা এক কথায় অতি অল্প এবং আনক দেরি হয়ে গেছে। সবাই জানে রাজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা আনেক আগেই ফিরে আসাত পারত যদি দুর্নীতিগ্রস্ত এই ডাক্তারদের চক্র ভেঙে দেওয়ার সময়চিৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া হত। এবং যে উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা এই নাক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের তৎক্ষণাৎ শাস্তি দেওয়া হত। আমার বিশ্বাস এই আন্দোলনে পথে নামা মানুষেরা অরাজনৈতিক এবং স্বতস্ফূর্তভাবে এই প্রতিবাদ করছেন। অতএব রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে এই আন্দোলনকে প্রতিরোধ করা সমীচীন হবে না।
সরকারের প্রতি মানুষের এমন ক্ষোভ ও অনাস্থা আমি আগে দেখিনি। আরজি কর কাণ্ডে আপনার সক্রিয় পদক্ষেপ আশা করেছিলাম। এখন সরকার যা করছে খুবই সামান্য। মানুষের ক্ষোভের স্বতঃস্ফূর্ততা দুর্নীতিগ্রস্তদের প্রশ্রয় দেওয়া। সরকার যা পদক্ষেপ নিচ্ছে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।’
চিঠিতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দিল্লি গিয়ে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়ে পদত্যাগ করবেন বলেও জানান তিনি।