
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ড. শফিকুর রহমান মন্তব্য করে বলেন,চাঁদাবাজির কারণে একদল ঘৃণা কুড়িয়েছে, আরেকদল সর্ব শক্তি নিয়ে নেমেছে ।
তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশের মানুষ এখনো সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেননি। ফ্যাসিস্টরা দেশ থেকে পালালেও ফ্যাসিজমের কালো ছায়া এখনো কাটেনি। একদল অপকর্ম করে পালিয়েছে, আরেকদল সেই অপকর্মের দায় কাঁধে তুলে নিয়েছে। কেউ চাঁদাবাজি করে জনগণের ক্ষোভের কারণ হয়েছে, আবার কেউ আরও বেশি শক্তি নিয়ে একই কাজ করছে। একদল দখলদার হয়ে জনগণের ঘৃণা কুড়িয়েছে, আর আরেকদল বেপরোয়া দখলদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেটের আলিয়া মাদরাসা মাঠে ইসলামী ও সমমনা আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খেলাফত মজলিসের আমীর আব্দুল বাছিত আজাদ।
‘একসময় বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ও আলেম–ওলামাদের জেল, নির্যাতন, ফাঁসি ও দেশছাড়া করার যে প্রবণতা ছিল, তা এখনো বন্ধ হয়নি। যারা আমাদের বিভিন্ন দেশের ভয় দেখাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই—আমরা কাউকে ভয় পাই না, কাউকে পাত্তাও দিই না।
ড. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন দেশব্যাপী হত্যা–নির্যাতনের তাণ্ডব চালিয়েছিল, তখন সিলেটবাসী তাদের লাল কার্ড দেখিয়েছিল। পরবর্তীতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তাদের বিদায় নিতে হয়েছে। বর্গিরা চলে যাওয়ার পরও দেশে যারা সুযোগ পেয়েছে, তারা জনগণের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। কেউ দেশে–বিদেশে ‘বেগম পাড়া’ বানিয়েছে, কেউ পালাতে গিয়ে খাল–বিলে লুকিয়েছে, আবার কেউ সিলেটবাসীর কাছে ধরা খেয়েছে।’
চাঁদাবাজ ও দখলবাজদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা যারাই চাঁদাবাজি করছেন, দখলবাজি করছেন, মানুষের উপর জুলম করছেন তারা এসব বন্ধ করুন। নয়তো অচিরেই আপনাদের কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। ’
বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়ন-নির্যাতন ও কারাবরণের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে খেলাফতে মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, ‘জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী শক্তি বিতাড়িত হওয়ার পরও বিদেশি আধিপত্যবাদী শক্তির বাংলাদেশি কিরণরা আবারও নতুন ফ্যাসিবাদ চাপিয়ে দিতে চাইছে। বাংলার মাটিতে নতুন কোনো ফ্যাসিবাদকে জায়গা দেওয়া হবে না। এই দেশের ইসলামী আন্দোলনের নেতারা রক্ত দিয়েছেন, ফাঁসির কাস্টে উঠেছেন, কিন্তু অন্যায়ের সামনে মাথা নত করেন নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচন শুধু প্রতীক নির্বাচন নয়, এটি ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এক ধরনের গণভোটও। তাই আট দলের নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে জনগণকে দলীয় প্রতীকের পাশাপাশি ‘হ্যাঁ’ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ‘বিগত ১৭ বছর যারা এই বাংলাদেশকে জিম্মি করে রেখেছিল, আজ তারা নিজেরা নিজেদের কাছে নিরাপদ নয়। দীর্ঘ ১৭ বছর পর আজ তারা নিজেরা নিজেদের খেয়ে ফেলছে। লক্ষ লক্ষ দলীয় নেতাকর্মী যুগ যুগ ধরে তাদের জীবনকে বিপন্ন করেছে জেলের মধ্যে।’ তিনি ৫দফা দাবির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল, জুলাই- ৫ আগস্টের অভ্যুত্থান। দেশকে সুন্দর করার জন্য সংস্কার করা হবে। এই গুমকারীদের, খুনিদের, টাকা পাচারকারীদের দৃশ্যমান বিচার হবে এবং পরে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে। কিন্তু আজকে আমরা হতোবাক! আমাদের সংস্কারে বাধা। অপরাধীদের দৃশ্যমান বিচারে বাধা দেয়া হচ্ছে। একদল পাগল হয়ে গেছে, নির্বাচনকে পেছানোর জন্যে। যতই শয়তানির পরিকল্পনা করবেন ততোই আপনারা বাংলাদেশের জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন।
অনুষ্ঠানের শেষে সকলে দেশ ও জাতীর কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করা হয়।