
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় চলছে কাঁঠালের মৌসুম, আর এ সময়টায় উপজেলার বিভিন্ন হাটে চলছে কাঁঠাল কেনাবেচার ব্যস্ততা। স্বাদে অতুলনীয় ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ জাতীয় ফল কাঁঠাল শুধু রসনার তৃপ্তিই নয়, বরং স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতেও দিচ্ছে বড় অবদান। প্রতি সপ্তাহে এখান থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকার কাঁঠাল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হচ্ছে।
উপজেলার প্রতিটি গ্রামেই চোখে পড়ে কাঁঠাল গাছ। প্রতি বছর এসব গাছে বিপুল পরিমাণ ফল ধরে। মূলত কুতুবপুর, বড়চওনা, কচুয়া, মহানন্দপুর, নলুয়া, তক্তারচালা ও দেওদীঘি—এই সাতটি হাটে চলে কাঁঠালের ব্যাপক বাণিজ্য।
বৃহত্তম কাঁঠালের হাট কুতুবপুর
জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে কুতুবপুর হাট রূপ নেয় কাঁঠালের প্রধান বাজারে। সপ্তাহে চারদিন বসা এই হাটে (শনিবার, রোববার, মঙ্গলবার, বুধবার) প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকার কাঁঠাল কেনাবেচা হয়। অন্য হাটগুলোর আয়ও নেহাত কম নয়—প্রতিটিতে সপ্তাহে ২০-৩০ লাখ টাকার কাঁঠাল বিক্রি হয়।
হাটের আগের দিন সন্ধ্যা থেকেই কৃষক ও খুচরা বিক্রেতারা কাঁঠাল নিয়ে হাজির হন। পরদিন দুপুর পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। পাইকাররা এখান থেকে কাঁঠাল কিনে ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠান।
পাইকার ও বিক্রেতাদের অভিজ্ঞতা
স্থানীয় ব্যবসায়ী আবুল কালাম ও বাবলু মিয়া জানান, তারা গ্রাম থেকে কাঁঠাল কিনে হাটে এনে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। আকার অনুযায়ী প্রতিটি কাঁঠাল ৩০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা গাছ থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করেন ২০ থেকে ৬০ টাকায়।
কুতুবপুর হাটের একজন ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন জানান, মৌসুমে একেক হাটে ১৫-২০টি ট্রাকে কাঁঠাল দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। এতে প্রতিটি হাটে প্রায় ১৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা পাইকার আব্দুল জলিল জানান, তিনি প্রতি সপ্তাহে একটি ট্রাক ভর্তি কাঁঠাল (প্রায় ২ হাজারটি) কিনে ঢাকায় বিক্রি করেন। লাভের অঙ্ক ছোট হলেও টিকে আছেন বলে জানান তিনি।
কৃষকদের হতাশা ও কৃষি বিভাগের পরামর্শ
তবে স্থানীয় অনেক কৃষক ও খুচরা বিক্রেতা অভিযোগ করেছেন, উৎপাদন ও পরিবহন খরচের তুলনায় লাভ খুব কম। ফলে তারা আগ্রহ হারাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে সখীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মন বলেন, কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল এবং এর প্রতিটি অংশই কোনো না কোনোভাবে ব্যবহারযোগ্য। সখীপুরে বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠালের চাষে আরও বেশি কৃষককে আগ্রহী করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।