গোয়াইনঘাটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও নগরীর আখালিয়া এলাকায় টিলাকাটার অভিযোগে সিলেটের বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (পরিবেশ) পৃথক মামলা দায়ের করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার পৃথক সময়ে মামলাগুলো দায়ের করেন পরিবেশ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. মামুনুর রশিদ ও সহকারী পরিচালক মো: বদরুল হুদা।
পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট সূত্রে জানা যায়, ২৭ অক্টোবর গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নের নাইন্দার হাওর ও বালির হাওরসহ অন্যান্য এলাকা পরিদর্শনে যায় পরিবেশ অধিদপ্তর। তখন এসব জায়গা থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পরিবহন করতে দেখা গেছে। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদদাতাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আদালতে এ মামলা করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন- মো. আব্দুল হান্নান, জিয়া উদ্দিন, মো. শরীফ, জসিম উদ্দিন, গোলাম সারোয়ার, সুমন আহমদ, রানা মিয়া, রুবেল মিয়া, সাহেল আহমদ, আল আমিন, ইয়াছিন আলী, জাহাঙ্গীর মিয়া, দেলোয়ার মিয়া, আমির মিয়া, সুমন আহমদ, সাহেদ আহমদ, নুরুজ্জামান, সামছুল আলম, সাইদুল ইসলাম, শামীম আল মামুন মনির, মোজাম্মেল হোসেন, শাহজাহান সিরাজ, সজীব আহমদ, আবু তাহের, রায়হান হোসেন, দুলাল মিয়া, আলী হোসেন, নূরুল ইসলাম মোল্লা, আলিম উদ্দিন ও রহমান শিকদার।
জানা গেছে, সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে জড়িত থাকায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। বুধবার (৩০ অক্টোবর) সিলেটের বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (পরিবেশ) পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. মামুনুর রশিদ বাদী হয়ে এই মামলা করেন। মামলায় প্ররিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকেও আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মো. মামুনুর রশিদ বলেন, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা হওয়ার পরও এসব এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর এসব অবৈধ কাজ আরও বেড়ে গেছে। তাই অভিযানের পাশাপাশি আমরা সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা দায়ের করছি।
এদিকে সিলেট নগরীর জালালাবাদ থানা এলাকায় অবৈধভাবে টিলাকেটে ঘর নির্মাণ করায় ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। মামলায় ৪ জনকে আসামী করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সিলেটের বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (পরিবেশ) মামলাটি দায়ের করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো: বদরুল হুদা।
মামলার আসামীগণ হলেন- হাওলাদারপাড়ার শশী মোহন দাসের পুত্র রূপক দাস (৩৫), ব্রাহ্মণশাসন এলাকার মতি লাল দাসের পুত্র বিনয় কুমার দাস (৪৫), হাওলাদারপাড়ার মৃত নরী দাসের পুত্র চন্দন দাস (৫৫) ও একই এলাকার কস্তর আলীর ছেলে মোঃ এরশাদ (৪২)।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (২৯) অক্টোবর নগরীর ৮নং ওয়ার্ডের আখালিয়া হাওলাদারপাড়া জগদীশ টিলা এলাকায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও মহানগরর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (রাজস্ব) সার্কেলের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তখন সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ঐ এলাকায় মামলায় উল্লিখিত আসামীদের নেতৃত্বে টিলাকেটে বসতঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে গত বুধবার (৩০ অক্টোবর) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে মামলার আসামীগণ দীর্ঘদিন থেকে সরকারী টিলা কেটে গরীব লোকজনকে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে ঘর নির্মাণ করতে সহায়তা প্রদান করেন। তারা পরস্পর যোগসাজসে টিলাকেটে ঘর নির্মাণের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট জেলার সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সমন জারির নির্দেশ দিয়েছেন। ঐ এলাকায় একাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট পাহাড়-টিলা কেটে পরিবেশ ধ্বংস করছে। তারা টিলার পাদদেশে গরীব মানুষকে বসবাসের জায়গা করে দিয়ে তাদের জীবনেক ঝুকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান ও আইনী ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, তারা বর্ণিত স্থানে টিলার অংশবিশেষ কর্তন করে টিলা ঘেষে টিনশেডের আনুমানিক ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থ একটি ঘর নির্মাণ করেছেন। নির্মিত ঘরগুলো খুবই ঝুকিপূর্ণ এবং অতিবৃষ্টিতে টিলার মাটি ধ্বসে প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে।