সিলেটের গোলাপগঞ্জ মডেল থানার বর্তমান অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর আব্দুল নাসের ও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ‘হত্যা মামলা ডাইভার্টের চেষ্টা’র অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে নিহত সানির পরিবার।
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ তুলেন সানির বাবা মো. কয়ছর আহমদ। তিনি বলেন, গোলাপগঞ্জ থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ আব্দুল নাসের ও স্থানীয় বিএনপির কতিপয় নেতা উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলাকে ‘ডাইভার্ট’ করতে চাচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে কয়ছরের পক্ষে লিখিত ব্ক্তব্য পাঠ করেন সানির মামা মো. আলী আব্বাস।
সংবাদ সম্মেলন থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক দফা দাবিতে গত ৪ আগস্ট সিলেটের গোলাপগঞ্জ ছিলো রণক্ষেত্র। এদিন পুলিশ, বিজিবি এবং আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলা-গুলিতে আন্দোলনকারী ৬ জন নিহত হন। পরে হাসপাতালে মারা যান আহত একজন। এই সাতজনের মধ্যে একজনের নাম সানি আহমদ (১৮)। তিনি উপজেলার রায়গড় গ্রামের মো. কয়ছর আহমদের ছেলে। ৪ আগস্ট দুপুরে সানি উপজেলার ধারাবহর এলাকায় গুলিতে নিহত হন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়- ঘটনার সময় (৪ আগস্ট) গোলাপগঞ্জ থানার সে সময়ের ওসি মাছুদুল আমিন ও উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিজিৎ রায়ের প্রত্যক্ষ নির্দেশে সানিসহ সকল আন্দোলনকারীর উপর নির্বিচারি গুলি চালায় পুলিশ, বিজিবি সদস্য এবং আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিন সানির মৃত্যুর পর পরিবারের লোকজন হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। শোক কিছুটা কাটিয়ে উঠে সানির বাবা ২৫ আগস্ট ওসি মাছুদুল আমিন ও এসিল্যান্ড অভিজিৎ রায় এবং সংঘর্ষকালে ঘটনাস্থলে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাদের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু সেটি মামলা হিসেবে আমলে নেননি বর্তমান ওসি মীর মোহাম্মদ আব্দুন নাসের। এর দুদিন পর স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতা সানির বাড়িতে গিয়ে ‘ওসি বলেছেন মামলা রেকর্ড করতে কাগজে স্বাক্ষর লাগবে’ এ কথা বলে কয়েকটি সাদা কাগজে তার বাবা কয়ছরের স্বাক্ষর নিয়ে চলে আসেন। কিন্তু পরবর্তীতে মামলার বিষয়ে আর কিছু জানানো হয়নি কয়ছরকে। এমনকি থানায় উপস্থিত হয়ে তিনি ওসি’র সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও মীর মোহাম্মদ আব্দুন নাসের দেখা করেননি এবং কোনো তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেননি। এ অবস্থায় থানাপুলিশের উপর থেকে ভরসা হারিয়ে কয়ছর ২ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জুজিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২ নং আমলি আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে থানাপুলিশকে এফআইআর করার নির্দেশ দেন।
এদিকে, আদালতে মামলা দায়েরের পর কয়ছর জানতে পারেন- থানায় দেওয়া তার অভিযোগ ওসি আমলে না নিয়ে মনগড়া একটি এজাহার লিখে এতে তৎক্ষালীন ওসি মাছুদুল আমিন ও এসিল্যান্ডকে বাদ দিয়ে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। অথচ এ বিষয়ে কয়ছর কিছুই জানেন না।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়- কছয়র আদালতে মামলা দায়েরর পর আদালতের থানাপুলিশ এবং বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সে মামলা তুলে নিতে বার বার চাপ দিচ্ছেন। মামলা প্রত্যাহার না করলে কয়ছর ও তার পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় তারা বাড়িছাড়া। থানার বিতর্কিত মামলা প্রত্যাহার ও আদালতের মামলা চলমান রাখতে কয়ছর সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি বরাবারে গত ৫ সেপ্টেম্বর একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র-উপদেষ্টা, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আদালতের সুদৃষ্টি কামনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন কয়ছর আহমদ।
সংবাদ সম্মেলনে সানির পরিবার দাবি করে- শুধু তাদের মামলা নয়, গোলাপগঞ্জের সব মামলা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে- ঘটনাবলীর মূল অভিযুক্ত তৎক্ষালীন ওসি মাছুদুল আমিন ও এসিল্যান্ড অভিজিৎ রায় এবং সংঘর্ষকালে ঘটনাস্থলে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাদের নাম উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তারা থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ আব্দুন নাসেরের প্রতি দোষারোপ করেন।