সিলেটে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে সুরমা বয়েজ ক্লাবের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টম্বর) বিকেল ৫টায় নগরীর ইলেকট্রিক সাপ্লাই বিদ্যুত অফিসের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
সিলেটে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে সুরমা বয়েজ ক্লাবের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টম্বর) বিকেল ৫টায় নগরীর ইলেকট্রিক সাপ্লাই বিদ্যুত অফিসের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
সুরমা বয়েজ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সহ-সভাপতি গোপাল বাহাদুরের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সিলেট নগরীতে বিদ্যুতের লোডশেডিং অসহনীয় হয়ে পড়েছে। কর্তৃপক্ষ নিদিষ্ট কোনো সময় নির্ধারণ না করে ঘন্টায় ঘন্টায় লোডশেডিং করছে। এতে করে নগরবাসী চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। অসহনীয় গরমের মধ্যে লোডশেডিং থাকায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। অন্ধকারের মধ্যে ব্যবসা করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারনে বাসা বাড়িতে দেখা দিয়েছে পানির চরম সংকট। প্রচন্ড গরমে বিদ্যুত না থাকায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। বক্তারা অবিলম্বে বিদ্যুতের এ লোডশেডিং বন্ধের দাবি জানান এবং কি কারনে বারবার এই লোডশেডিং করা হচ্ছে তার কারন সিলেটবাসীকে জানানোর আহবান জানান। সিলেটে বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অনেক বেশি থাকার পরেও কেন এ লোডশেডিং করা হয় তা সিলেটবাসীর বোধগম্য নয়। ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে লোডশেডিং করে সিলেটবাসীর প্রতি চরম বৈষম্যের এ নীতি পরিহারের আহবান জানান বক্তারা।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সুরমা বয়েজ ক্লাবের সিনিয়র সদস্য আব্দুল আহাদ এলিছ, শ্রমিক নেতা এম বরকত আলী, সিলেট প্রেসক্লাবের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক শেখ আব্দুল মজিদ, সাংবাদিক হাসান মো. শামীম, সুরমা বয়েজ ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক রেজওয়ান আহমদ, সাংবাদিক মামুন চৌধুরী, সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেন দিলু, নাদিম আহমদ টিপু, মো. শিপন মিয়া প্রমুখ।
জানা গেছে, মঙ্গলবার ( ১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিলেট জোনে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৯০.৬০ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ করা হয়েছে ১৩৬.৮৫ মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় ২৮.২০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ পেয়েছে সিলেট জোন।
এছাড়া সিলেট জেলায় মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৩৪.৭২ মেগাওয়াটের বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ৯৩.৬৬ মেগাওয়াট। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় সিলেট জেলায় ওই সময়ে ৩০.৪৭ শতাংশ কম বিদ্যুৎ পেয়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও বিতরণ বিভাগ থেকে সিলেট জেলায় প্রায় ৩০ শতাংশ ঘাটতি দেখানো হলেও মুলত এর চেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছেন মানুষ। সিডিউল লোডশেডিং ছাড়াও নানা ত্রুটির কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থাকছে। ফলে গড়ে ১২ ঘন্টার বেশি বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না সিলেটবাসী।
বিদ্যুতের সীমাহীন ভোগান্তির কারণে সিলেটে ফুঁসে ওঠছেন সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান আজ বুধবারের মধ্যে না হলে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার ঘোষনা দিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলা শাখা এবং সিলেট জেলা ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যান পরিষদ।
এদিকে, ভয়াবহ লোডাশেডিংয়ের কারণে বিসিক শিল্পনগরীর উদ্যোক্তারা মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। বিসিক শিল্প মালিক সমিতি গোটাটিকরের সভাপতি কাজী মঈনুল হোসেন ও সেক্রেটারি আলীমুল এহছান চৌধুরী জানান, গোটাটিকর বিসিকে কোল্ড স্টোরেজ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক শিল্পসহ বিভিন্ন ধরণের প্রায় ৪৫টি শিল্প কারখানা রয়েছে। বিগত ১ সপ্তাহ ধরে উক্ত শিল্পনগরী এলাকা ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে। আগে যেখানে সারা মাসে ১৫-২০ ঘন্টা লোডশেডিং হতো, এখন সেখানে দৈনিক ৪-৫ ঘন্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এভাবে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারনে কারখানাগুলোর উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলা শাখার মহাসচিব ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন জানান, অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। ঘন্টায় ঘন্টায় লোডশেডিংয়ের কারণে বিরূপ প্রভাব পড়ছে ব্যবসা বাণিজ্যে। লোডশেডিংয়ের কারণে ক্রেতারা মার্কেটে আসছেন না। এই অবস্থায় ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হলে ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামবে।
সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির জানান, বিদ্যুতের লোড ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব সিলেট অফিসের হাতে নেই। সিলেটের সমস্যার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। লোডশেডিং বাড়ানো বা কমানো সিলেটের কর্মকর্তাদের এখতিয়ারের বাইরে। তারপরও জনগণের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে সিলেটের কর্মকর্তাদের।
সিলেট বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু হোসাইন জানান, মঙ্গলবার বিদ্যুৎ বিভাগের একটি অভ্যন্তরীণ সভা হয়েছে। ওই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিলেটের বিদ্যুতের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে ঢাকায় একটি প্রতিবেদন পাঠানো হবে। এরপর ঢাকা থেকে কী সিদ্ধান্ত আসে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।