শত শত যাত্রীসহ চলন্ত ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ৬০ বছর বয়সী সন্দেহভাজন একজনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে!
শনিবার (৩১ মে) সকালে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল সাবওয়েতে ৫ নম্বর সাবওয়ে লাইনে এ ঘটনা ঘটে। চলন্ত ট্রেনের ভেতরে আগুন লাগার ফলে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনাটি ঘটেছে সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে, যখন ট্রেনটি এয়ইনারু স্টেশন থেকে মাফো স্টেশনের দিকে যাচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, আগুন লাগার পর প্রায় ৪০০ জন যাত্রী টানেলের মধ্য দিয়ে হেঁটে নিরাপদ স্থানে সরে যান। এদের মধ্যে ২১ জন ধোঁয়া শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ, পা মচকে যাওয়া ও হালকা আঘাতের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ট্রেনের চালক এবং কিছু যাত্রী প্রাথমিকভাবে আগুন নেভাতে সক্ষম হন। এরপর ফায়ার সার্ভিস এবং পুলিশ মিলিয়ে মোট ২৩০ জন কর্মী এবং ৬৮টি সরঞ্জাম নিয়ে উদ্ধার কাজ চালান এবং সকাল ১০টা ২৪ মিনিটে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। এই সময়ের মধ্যে এয়ইদো থেকে অ্যাওগে পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে, যা সকাল ১০টা ১২ মিনিটে আবার চালু হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার ফৌজদারি আইন অনুযায়ী, যাত্রীসহ চলন্ত ট্রেনে আগুন লাগালে সর্বনিম্ন ৩ বছর থেকে শুরু করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত শাস্তির বিধান রয়েছে। কেউ আহত হলে শাস্তি বেড়ে ৫ বছর বা তারও বেশি হয়, আর মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।
২০০৩ সালের দেগু সাবওয়েতে অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহ স্মৃতি এখনও অনেকের মনে গেঁথে আছে, যেখানে ২০০ জনের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। এই কারণে সাবওয়েতে অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধের জন্য কোরিয়ান আদালত সাধারণত কঠোর শাস্তির আদেশ দেন।
২০১৪ সালের একটি ঘটনায়ও একই ধরনের ঘটনা ঘটে, যেখানে এক ব্যক্তি সাবওয়ে লাইনের একটি ট্রেনে দাহ্য পদার্থ ছড়িয়ে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে। সে ঘটনায় একজন নারী যাত্রী গুরুতরভাবে আহত হন এবং আদালত অপরাধীকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, ‘সাবওয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ গণপরিবহন ব্যবস্থা। এতে ইচ্ছাকৃত অগ্নিসংযোগ কেবল ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নয়, বরং জনসাধারণের জীবনের জন্যও বড় হুমকি তৈরি করে।’
এই ঘটনাটি পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেয় যে, গণপরিবহনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কতটা জরুরি এবং এমন অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য।
সিউলের ইঅংদংফো পুলিশ জানায়, ৬০ বছর বয়সী এক পুরুষ যাত্রী আগুন লাগানোর সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। তার হাতে আগুন লাগার চিহ্ন দেখা যায় এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই সে অপরাধ স্বীকার করে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ব্যক্তি একটি তেলের কন্টেইনার নিয়ে ট্রেনে উঠেছিল এবং একটি লাইটার টর্চ ব্যবহার করে জামাকাপড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।