
ছাতক প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের ছাতকে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ কাঁদে নিয়ে বহাল তবিয়তে আছেন বিতর্কিত এক শিক্ষক। তিনি উপজেলার জাউয়াবাজার ইউনিয়নের পাইগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হেনা। শিক্ষকতার শুরু থেকেই তার পিছু ছাড়ছে না অনিয়ম-দূর্নীতি।
শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধ ডজন স্কুল থেকে তাকে বদলী হতে হয়েছে বদনাম কাদে নিয়ে। চাকুরী জীবনে এমন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠেনি। অনিয়ম-দূর্নীতির কারণে শিক্ষকতার মহান পেশাকে তিনি কলঙ্কিত করছেন।
অনিয়ম-দূর্নীতি প্রমানিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানে তার বিরুদ্ধে রেজুলেশন করা হলেও শুধরান নি। বিগত সরকারের আমলের চেয়ে বেশি দাপটে রয়েছেন তিনি। এমন কি তিনি ২৯ নভেম্বর ছাতক উপজেলা শিক্ষক সমিতিতে সভাপতি পদে নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
খোজ নিয়ে জানাযায়, আবু হেনা নামের ওই শিক্ষক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের হাজী কমর আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষকতা শুরু করেন। এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের মাধ্যমে চাকুরী পেয়ে ২০০৭ সালে দশম শ্রেণীর টেস্ট পরিক্ষায় গনিত ও ইংরেজি প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। যা একই বছরের ১৬ জানুয়ারী বিদ্যালয়ের রেজুলেশনে লিপিবদ্ধ রয়েছে।অবশেষে অভিযুক্ত হয়ে তিনি অন্যত্র বদলী হোন।
পরে উপজেলা শিক্ষক সমিতির তৎকালিন সভাপতি বাবু দিগেন্দ্র তালুকদারের সহযোগিতায় তিনি আজমত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। সেখানেও তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এর পর তাকে মল্লিকপুর এসি,এস,ডি,পি উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলী করা হয়। মাত্র দুই বছরের মাথায় এখানেও তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ উঠলে তাকে পুনরায় বদলী করা হয় উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়নের একতা উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানেও তার বিরুদ্ধে পুনরায় আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তৎকালীন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন শাহেল আর্থিক অনিয়মের দায়ে তাকে লাঞ্চিতও করেন। এতো কিছুর পরও তার দাপটের কাছে হার মানতে হয়েছে তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের। সর্বশেষ তিনি জাউয়াবাজার ইউনিয়নের পাইগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে পুনরায় অর্থিক অনিয়ম ও দায়িত্ব অবহেলা সহ নানা অভিযোগ ওঠে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারী ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে আবু হেনার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ তদন্তে তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দায়িত্ব অবহেলার সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি। যে কারনে গত ২৭ জুলাই ওই শিক্ষককে বিধি মোতাবেক সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ৫ আগষ্টের পর তার বিরুদ্ধে একাধিক তদন্ত প্রতিবেদনে এসব অনিয় দুর্নীতির তথ্য উঠে আসলেও তিনি আগামী ২৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত উপজেলা শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। প্রশ্ন উঠেছে তিনি যেকোন সময় আদালত কর্তৃক অপরাধী প্রমানিত হলে, শিক্ষক সমাজে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। একজন শিক্ষকের এমন বদনাম মেনে নিতে পারছেন না শিক্ষক সমাজ ও সচেতন মহল। নাম প্রাকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, আবু হেনা শিক্ষক সমিতির নেতা হলে পুরো শিক্ষা জাতী কলংকিত হবে। একজন শিক্ষকের চাকুরী জীবনে এতো অভিযোগ উপজেলায় দ্বিতীয় কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আবু হেনা বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো রয়েছে, সেগুলো ইতোমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে। আর আমাকে সাময়িক বরখাস্তের যে আদেশ ছিল, সেটি বর্তমানে হাইকোর্টে স্থগীত আছে। তাই অভিযোগগুলো নিয়ে যে প্রচার চলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।