ঈদুল আজহা উপলক্ষে সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে জমে উঠতে যাচ্ছে কোরবানির পশুর হাট। হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন গরু-ছাগল কিনতে এসব হাটে ভিড় করবেন, আর লেনদেন হবে কোটি কোটি টাকার। আর এই বিশাল নগদ লেনদেনের সুযোগকেই পুঁজি করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জাল টাকার সিন্ডিকেট।
সম্প্রতি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে একটি বড় জাল টাকা সিন্ডিকেটের সদস্য যুগেন্দ্র মল্লিককে প্রায় ৩ লাখ টাকার জাল নোটসহ গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। তার কাছ থেকে ১৫৫টি এক হাজার টাকার ও ২০০টি পাঁচশ টাকার নোট পাওয়া গেছে, যেগুলোর গন্তব্য ছিল দেশের বিভিন্ন কোরবানির হাট। পুলিশ জানায়, আটক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং আগে গ্রেপ্তার হলেও ফের একই কৌশলে সক্রিয় হয়েছিল।
এদিকে সুনামগঞ্জেও একই ধরনের চিত্র। জগন্নাথপুরে ২৫টি জাল নোটসহ সুজাত মিয়া নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধেও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র বলছে, প্রতি বছর কোরবানির হাটে জাল টাকা ছড়ানোর পরিকল্পনা থাকে চক্রগুলোর। কারণ, হাটে এত মানুষ ও এত দ্রুত লেনদেন হয় যে, অনেকেই হাতে টাকা পেলেও যাচাই করার সময় বা সুযোগ পান না। বিশেষ করে বিক্রেতারা অধিকাংশ সময় কাঁচা হাতে টাকা গুনে গরু হস্তান্তর করেন। এই সুযোগে চক্রগুলো মূলত ৫০০ ও ১০০০ টাকার জাল নোট ছাড়ে।
জাল টাকা সিন্ডিকেটের এমন তৎপরতায় উদ্বিগ্ন সিলেটের হাট ব্যবসায়ীরা। পশুর হাটে লেনদেনের সময় অনেকেই জাল নোট চেনার অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রতারণার শিকার হন। অথচ নগদ লেনদেন হওয়ায় টাকা ফেরত পাওয়ারও উপায় থাকে না।
এই প্রেক্ষাপটে সিলেট জেলা প্রশাসন নগরীতে সাতটি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর অনুমোদন দিয়েছে, যেখানে টোল আদায়, প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ, স্বাস্থ্যবিধি, পরিচ্ছন্নতা রক্ষা ছাড়াও জাল টাকা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা রাখার শর্ত জুড়ে দিয়েছে। তবে মাঠপর্যায়ে এসব শর্ত বাস্তবায়ন কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোরবানির হাটে জাল টাকা ছড়ানো রোধে পুলিশি তৎপরতার পাশাপাশি হাট ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ, নোট যাচাই যন্ত্রের উপস্থিতি ও সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
একইসঙ্গে হাটে গরু বিক্রেতাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, লেনদেনের সময় একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে। কারণ, একবার প্রতারিত হলে ঈদের আগে আর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকে না অনেকেরই।
সিলেটের কোরবানির হাটে এবারও প্রাণচাঞ্চল্য থাকবে, থাকবে উৎসবের আমেজ। তবে উৎসবের এই আমেজ যেন প্রতারণার ছোবলে ম্লান না হয়—সেজন্য সময় থাকতেই প্রয়োজন জোরালো নজরদারি ও সচেতনতা।
আর পুলিশ বলছে, জাল টাকার সিন্ডিকেট ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে তারা। পশুর হাটগুলোতে থাকবে কঠোর নজরদারি।