হাসিনার সরকারে পতনের পর গ্রেফতার হয়েছেন অনেক রথী-মহারথী। তাদের রিমান্ডে নিয়ে বের করা হচ্ছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান। তিনিও রয়েছেন রিমান্ডে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ।
জিয়ার কাছে ইলিয়াস আলীর বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে প্রশ্ন ছিল ডিবি’র- ‘ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার পর তিনি আপনাকে ফোনে বলেছিলেন, ইলিয়াসকে ছেড়ে দাও। আপনি ওই সময় বলেছিলেন, ‘ইলিয়াস আলীকে কিছুক্ষণ আগে শেষ করে দেওয়া হয়েছে।
এ প্রশ্নের জবাবে নীরব থাকেন জিয়া। খবর ‘যুগান্তর’র।
‘আয়নাঘর’ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বলেন, ওটা আমার বিষয় না। গ্রেফতারের আগে ৮ দিন আমাকেও সেখানে অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থায় রাখা হয়। এর কারণ হলো-আয়নাঘরের কারিগরদের কাছে যেসব সরঞ্জামাদি ছিল এনটিএমপি প্রতিষ্ঠার পরপর সেগুলো কিছু আমি নিয়ে আসি। এ কারণে তারা আমার প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল। মানুষের কল রেকর্ডের বিষয়ে জিয়াউল আহসান বলেন, সবার মোবাইল ফোন রেকর্ড করা হয়নি। তাকে প্রশ্ন করা হয়, ‘বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে কেন গুম করেছেন? ফার্মগেট থেকে জাতীয় পার্টির এক নেতাকে তুলে এনে কেন হত্যা করছেন?
লোক যদি না মারা যায় তাহলে নারায়ণগঞ্জে লাশ পাওয়া গেলে কেন? ডিবির এমন প্রশ্নের জবাবে জিয়া বলেন, সেগুলো নারায়ণগঞ্জে মারা গেছেন। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বলেন, ওই ঘটনায় সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মেয়ের জামাই এমদাদ জড়িত। ‘সেভেন মার্ডারের পর সেখানে আরও দুটি খুন হয়েছে। ওই দুটি খুন আপনি নিজে করেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে জিয়া বলেন, ‘কী বলেন? আমি এসবের কিছুই জানি না। প্রধানমন্ত্রীকে আমি বিভিন্ন সময়ে নানা বিষয়ে সতর্ক করেছি।’
এছাড়া জিয়ার কাছে প্রশ্ন ছিল- ‘২০১৩ সালে আপানি র্যাবের ইন্টেলিজেন্স শাখার প্রধান ছিলেন তখন শাপলা চত্বরে এতগুলো মানুষ মারার প্রয়োজন কী ছিল?’
জবাবে বলেন, ‘তৎকালীন আইজি, র্যাব ডিজি এবং পুলিশ কমিশনার আমাকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি চেষ্টা করেছি, যে কোনো মূল্যে শাপলা চত্বর ফাঁকা করার। আমরা ফাঁকা গুলি করেছি। তবে সেখানে কোনো লোক মারা যায়নি।’
জিয়ার মতো বেশি জেরার মুখে আছেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তারা ডিবিকে জানিয়েছেন, আন্দোলনের শেষের দিকে ছাত্রদের পক্ষে কথা বলায় পলককে গণভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর চাপের কারণেই টেন মিনিট স্কুলের সঙ্গে ৫০০ কোটি টাকার চুক্তি বাতিল করা হয়। টুকু জানান, মন্ত্রী হওয়ার কোনো ইচ্ছা তার ছিল না। শুধু প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় তিনি মন্ত্রী হয়েছিলেন। সালমান এফ রহমান বলেন, এর আগে আমি ২ বছর জেল খেটেছি। সুতরাং আমার কোনো সমস্য হবে না। তবে আমাকে জেলে রাখা হলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর জিয়াউল আহসান বলেন, আমার ওপর বিশেষ দায়িত্ব ছিল। আমার প্রতিষ্ঠান থেকে সবার মোবাইল ফোনকল রেকর্ড করা হয়নি। নির্দিষ্ট কিছু লোকের ফোনকল রেকর্ড করা হয়। কারও হোয়াটসঅ্যাপস কল রেকর্ড করা হয়নি। ভয় দেখানোর জন্য এটা ছড়ানো হয়েছে যে, হোয়াটসঅ্যাপ রেকর্ড করা হচ্ছে।
এ সময় তারা ডিবি কর্মকর্তাদের বলেন, ‘আপনারা জানেন না শেখ হাসিনা কত বড় একরোখা মানুষ।’ তখন ডিবির প্রশ্ন-‘আপনারা নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেননি। নিজেদের বিবেকের কাছ কী দায় এড়াতে পারবেন? এ সময় তারা না-সূচক জবাব দেন।