ঢাকামঙ্গলবার , ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

টিলা কেটে শতাধিক প্লট বিক্রি অভিযোগের তীর আওয়ামী লীগ ও জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে

rising sylhet
rising sylhet
ডিসেম্বর ১০, ২০২৪ ৯:৩৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার::সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন টিলা কেটে শতাধিক প্লট, ঘর-বাড়ী নির্মাণ এবং বিক্রির অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে। রাতের আঁধারে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন এসব টিলা কেটে ঘর-বাড়ী নির্মাণ এখনও হচ্ছে। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিক্রি হচ্ছে প্লট! ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে ওই এলাকার একাধিক টিলা।

সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩৭ নং ওয়ার্ডের আখালিয়ার টিলার গাঁওয়ে চলছে এই তান্ডবলীলা।

অনুসন্ধানে মিলেছে এসব সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন টিলা কেটে প্লট, ঘর-বাড়ী নির্মাণ এবং বিক্রির চাঞ্চল্যকর তথ্য এবং প্রয়োজনীয় কাগজাদি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকেই এসব সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানা টিলা কেটে জায়গা এবং প্লট বিক্রি করেছেন বিমান বন্দর থানাধীন টিলার গাঁও গ্রামের উমর আলীর ছেলে জামায়াত নেতা মেহেদী হাসান সুহেল, একই গ্রামের সামুদ আলীর ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমান আব্দুল এবং জালালাবাদ থানাধীন গোয়াবাড়ি এলাকার সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মির্জা জামাল পাশা। তারা টিলার জায়গার শ্রেণী পরিবর্তণ করে জায়গা এবং প্লট বাণিজ্য করেছেন।

একটি সূত্র জানিয়েছে, টিলারগাঁও এলাকায় টিলা কেটে বাড়ি নির্মাণ করায় ৯ জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন সিলেট জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. মামুনুর রশিদ। ওই মামলার ৩নং আসামী জামায়াত নেতা মেহেদী হাসান সুহেল।

গত ২১ নভেম্বর সিলেট সিটি করপোরেশনের টিলারগাঁও এলাকায় টিলা কেটে বাড়ি নির্মাণ করায় ৯ জনের নামে মামলা দায়ের করেছে সিলেট জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর।এই এলাকায় অবৈধভাবে টিলা কাটা বন্ধ এবং পরিবেশের বিপর্যয় ঠেকাতে অভিযান পরিচালনা করেন তারা। এসময় বিমানবন্দর থানায় ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়। মামলা নং ১৮/২৩৯। কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায় মূল হোতারা!

স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও তহশিল অফিসকে ম্যানেজ করেই এমন ঘটনা রচনা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই টিলা কেটে প্লট নির্মাণ ও বিক্রির তান্ডব শুরু হলেও এখনও তা অব্যাহত রয়েছে। টিলা কাটলে পরিবেশের বিপর্যয় হয়। তাই টিলা কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও অদৃশ্য কারণে বিষয়টি প্রশাসনসহ কারো নজরে আসছে না।

আখালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী কুমারগাঁও মৌজার জে, এল, নং-৮০ খতিয়ান নং-৮৬৬ এস,এ দাগ নং-২১১২ বি,এস সরকারি ১.৭৩ একর টিলা শ্রেনীর জায়গা মালিকানা দেখিয়ে দখলে নেন জামায়াত নেতা মেহেদী হাসান সুহেল। পরে মেহেদী হাসান সুহেল ভূয়া কাগজ-পত্র তৈরি করে মো. মোফাজ্জল, কয়েছ, রুহুল, রনি, আব্দুল্লাহ, জাহাঙ্গীর, আহমদ আলী, এনাম আহমদসহ বিভিন্ন লোকজনের কাছে টিলার জায়গা বিক্রি করেন। বর্তমানে মেহেদী হাসান সোহেলসহ তারা সবাই টিলা কেটে সেখানে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করেছেন।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমান আব্দুল দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ২০১০ সালের দিকে কুমারগাঁও মৌজার জে, এল, নং-৮০, খতিয়ান নং-১০১৫, এস,এ ২১০৭ দাগের ৫. ৫৩ একর টিলা শ্রেনীর জায়গা দখলে নেন। আব্দুর রহমান আব্দুলও ভূয়া কাগজ পত্র দেখিয়ে টিলার জায়গা বিক্রি করেন দেলোয়ার হোসেন রানা, জিয়া আহমদ, তোফায়েল হোসেন, পরিমল চন্দ্র, মিসবা, লোকমান, পরিতোষ, শোভাষসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তির কাছে। তারা সবাই সেখানে টিলা কেটে ঘরবাড়ি নির্মান করেছেন। পাশাপাশি আব্দুর রহমান আব্দুল নিজেও টিলা কেটে সেখানে একতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন।

অপরদিকে, ২০১১ সালের দিকে কুমারগাঁও মৌজার জে, এল, নং-৮০ এস,এ দাগ নং- ২১৪০ বি,এস সরকারি ৬.৬০ একর টিলা দখলে নেন সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মির্জা জামাল পাশা। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের নামে জামাল পাশা শুরু করেন প্লট বাণিজ্য। বিক্রি করেন প্রায় শতাদিক প্লট। মুক্তিযোদ্ধাদের নামে বরাদ্দ হলেও তিনি প্লট বাণিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। সে সময় জামাল পাশার অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করেন টিপকল সুহেল, যুবলীগ মহিলা নেত্রী মাহমুদা আক্তার রিনা, শমসের, লাভলু। বর্তমানে তারাসহ সবাই টিলা কেটে ঘরবাড়ি নির্মান করেছেন।

টিলা কেটে বসতঘর নির্মাণ করলে পরিবেশের ক্ষতি হয়। যা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০) এর ধারা ৬(খ) লঙ্ঘন, যা একই আইনের ১৫(১) টেবিলের ক্রমিক নং-৫ অনুসারে দণ্ডনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তারা এমন আইন লঙ্ঘন করেছেন!

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকেই জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কথা বা প্রতিবাদ করলে হামলা ও মামলার শিকার হতে হয়। যেকারনে ভয়ে কেউই প্রতিবাদ করেনি।

সিলেট বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আনিসুর রহমান জানান, তিনি এই থানায় নতুন। এসব বিষয় তিনি জানেন না। গত ২১ নভেম্বর টিলারগাঁও এলাকায় টিলা কেটে বাড়ি নির্মাণ করায় ৯ জনের নামে মামলা হয়েছে। মামলা নং ১৮/২৩৯। এঘটনায় একজনকে আটক দেখানো হয়। মামলার পর আটক ব্যক্তিকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্ত অন্য আসামিদের গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা জানান, এমন তথ্য কেউই তাদের জানায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এ বিষয়ে জামায়াত নেতা মেহেদী হাসান সুহেল, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমান আব্দুল এবং সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মির্জা জামাল পাশার মুঠোফোনে কল করলে তাদের ফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

১০২ বার পড়া হয়েছে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।