সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: তাহিরপুর সড়কের কাজের ধীরগতির কারণে ধুলাবালিতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের ।
সুনামগঞ্জের নিলাদ্রি লেক কিংবা শিমুল বাগান টাঙ্গুয়ার হাওরের বিস্তীর্ণ জলরাশি ছুঁয়ে যায় পর্যটকদের কোমল হৃদয় দেয় হাতছানি।
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকরা ছুটে যান বাউল সাধকের তীর্থস্থান ভাটিবাংলা খ্যাত সুনামগঞ্জে।
কিন্তু আগ্রহ নিয়ে যাওয়া পর্যটকদের বিমুখ করে সড়কের বেহাল অবস্থা। যদিও ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কের কাজ শুরু হয়েছে, কিন্তু কাজের ধীরগতির কারণে স্থানীয় জনসাধারণের পাশাপাশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পর্যটকদের। কেবল সড়কের দৈন্যদশার কারণে টান পড়েছে পর্যটনশিল্পে।
প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকসহ জেলার মধ্যনগর, ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার লাখ লাখ মানুষ সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়ক দিয়েই যাতায়াত করেন। প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষকেরাও যাতায়াত করেন।
সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সদর থেকে বালিজুরী ইউনিয়ন পর্যন্ত দুটি কালভার্টসহ আট কিলোমিটার সড়ক মেরামতে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ চলছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ স্থানীয়দের। সড়কটির বেহাল দশার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় পর্যটকসহ স্থানীয় জনসাধারণকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের একপাশে ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। অন্যপাশ বন্ধ। সড়কজুড়ে ইট-সুরকিসহ নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে। সড়কও অসমান ফেলে রাখা হয়েছে। এ কারণে বাগমারা, ভাটিপাড়া, কৈয়ারকান্দা ও শক্তিয়ারখলা অংশে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটছে। আর ধুলাবালিতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে দিনভর। ফলে পথেই নষ্ট হয় মানুষের কর্মঘণ্টা।
শক্তিয়ারখলা বাজারের ব্যবসায়ীদের কয়েকজন জানান, তাদের বাজারে ছোট-বড় মিলিয়ে দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সড়কের এক পাশের কাজ করে অন্য পাশের কাজ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে যানবাহন চলাচল করার সময় দোকানে ময়লা কাদাপানি আসছে। এ ছাড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে ইট-সুরকি ফেলে রাখায় পর্যটকদের গাড়ি, বিভিন্ন যানবাহন আটকে থাকছে। এতে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
অটোরিকশাচালক হামিদ মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঠিকাদার একবারেই কমসংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কাজ করছে। এ জন্য মেঘ-বৃষ্টির দিনে কষ্ট করেছি, এখনো করছি।
পর্যটক বহনকারী গাড়ির চালক মাসুক মিয়া ও হেলাল উদ্দিন বলেন, তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরসহ বিভিন্ন পর্যটন স্থানে যাওয়ার একমাত্র সড়কের কাজ কোনো সময় চালু থাকে, আবার কোনো সময় বন্ধ থাকে। এতে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছবাব মিয়া বলেন, শক্তিয়ারখলার শেষ অংশ থেকে উপজেলার সদরের নতুন পাড়া হয়ে জেলা শহর ও তাহিরপুরে চলাচলের একমাত্র সড়কে মেরামতকাজে নিম্নমানের বালু, সিমেন্ট, ইট-সুরকি ব্যবহার করা হয়েছে। সে কারণে প্রতিবাদ করে আসছি। আর সড়কে ইট-সুরকি ফেলে পানি না দেওয়ায় ধুলায় জনজীবন বিপর্যস্ত। কাজে ধীরগতির কারণে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে সর্বস্তরের মানুষ।
শক্তিয়ারখলা বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল বাছিত জানান, দ্রুত সড়কের সংস্কার না করায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। দীর্ঘ যানজটে নাজেহাল অবস্থায় পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। বর্ষার সময় বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা প্রকৌশলী একরামুল হোসেন বলেন, বিশ্বম্ভরপুর সদর থেকে আনোয়ারপুর ভায়া শক্তিয়ারখলা বাজারের মধ্যে বাঘমরা এলাকায় দুটি সেতুসহ ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সদরের নতুন পাড়াসহ কিছু এলাকায় কাজ হয়েছে।
বাকি সড়কেও কাজ চলমান। খুব শিগগিরই কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে তাগিদ দেবেন বলে জানান তিনি।
এই সড়কের মেরামতকাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।