থামছেনা সীমান্তের চোরাচালান • সীমান্ত এলাকা ঘুরে প্রতিবেদন ।
সীমান্তের চোরাচালান নিয়ে রেঞ্জ ডিআইজি, এসএমপি কমিশনার ও ট্রাক্সফোর্ডের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বিজিবির হাতে চোরাচালানের পণ্য আটক হলেও থানা পুলিশের ভূমিকা নিরব দর্শকের মতো। চোরাচালান থেকে রেঞ্জ ও এসএমপি পুলিশের কোন কর্মকর্তা প্রতিমাসে কত টাকা বখরা আদায় করেন তা থাকছে আগামী সংখ্যার প্রতিবেদনে। কেন অভিযান চালিয়েও কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না সিলেটের গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান। এসব উপজেলার অন্তত শতাধিক স্থান দিয়ে চোরাই পণ্য প্রবেশ করছে। প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকা মূল্যের রসুন যাচ্ছে সীমান্তের ওপার ভারতে।
তবে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বলছে- তারা সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন। সিলেট বিজিবির ৪৮ ব্যাটালিয়ন জানিয়েছে, তাদের আওতাধীন এলাকায় চলতি বছরের জুলাই থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০২ কোটি ৭৪ লাখ ৮৯২ টাকা মূল্যের মালামাল জব্দ হয়েছে। সর্বশেষ ১৮ ডিসেম্বর এই ব্যাটালিয়ন গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্ত এলাকা দমদমিয়া, সোনারহাট, তামাবিল, প্রতাপপুর, সংগ্রাম ও বিছনাকান্দি পান্থুমাই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভারতীয় চোরাই পণ্য জব্দ করেছে। এ ব্যাপারে সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ঊর্ধ্বতন সদরের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি’র আভিধানিক কার্যক্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এবছরের জুলাই থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০২ কোটি ৭৪ লাখ ৮৯২ টাকা মূল্যের মালামাল জব্দ করা হয়েছে। জানা গেছে, চোরাকারবারিরা ভারতের কিছু ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত গরু, মহিষ, চিনিসহ নানা পণ্য আনছেন। এসব পণ্য স্থানীয়ভাবে ‘বুঙ্গার মাল’ নামে পরিচিত। এই ‘বুঙ্গার মালে’ সয়লাব হচ্ছে পুরো সিলেট। সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রবেশ করছে গরু, মহিষ ও চিনি। একটি সূত্র জানিয়েছে, চোরাকারবারিদের নিয়োগ করা শ্রমিকেরা দিন-রাত সুযোগ বুঝে ৫০ কেজির চিনির একেকটা বস্তা মাথায় করে সীমান্ত পার করেন। পরে নৌকা, মোটরসাইকেল কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে মজুত করা হয়। এরপর একশ্রেণির ব্যবসায়ীদের তৎপরতায় এসব চিনি সিলেট নগরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়। একইভাবে প্রসাধন সামগ্রী, কাপড়, মাদক, আপেল, কম্বলসহ বিভিন্ন পণ্য আসছে। পুলিশ জানায়, সিলেটে ভারত থেকে চোরাই পথে সাধারণত চিনি বেশি আসে। এর বাইরে বেশি আসে প্রসাধন সামগ্রী, বিভিন্ন ধরনের মাদক ও গরু। তবে সম্প্রতি আপেল ও কম্বলও আসছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের চকলেট, চা-পাতা, বিস্কুট, কোমল পানীয়, হরলিকস, কাজুবাদাম, নানা ধরনের ক্রিম, স্পোর্টস বুট জুতা, পাতার বিড়িসহ বিভিন্ন পণ্য আসছে। গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল জানান, চোরাচালানবিরোধী কার্যক্রম জোরদার করেছি। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি যারা চোরাচালানে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে অবৈধ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে সর্বশেষ ১৭-১৮ ডিসেম্বর (মঙ্গল ও বুধবার) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ১ কোটি ২৮ লক্ষ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করেছে বিজিবি সিলেট সেক্টরের ৪৮ ব্যাটালিয়ন বিজিবি।