দায় নিতে রাজি নয় কেউ,পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ফুটপাথের স্লাব।
জিন্দাবাজারের সৌন্দর্য বাড়িয়েছিল রাস্তার দু’পাশের ড্রেন ও উপরে টাইলসের স্লাবের এই কাজ। কিন্তু এক বছরের মাথায় এসে সিটি করপোরেশনের ড্রেন ও স্লাব ভাঙার মিছিলে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে জিন্দাবাজারের ফুটপাথ। হাঁটতে গিয়ে মানুষ আহত হচ্ছেন। অন্তত ১০-১২ কোটি টাকার কাজ চোখের সামনেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে টানা-হেঁচড়া চলছে নগর ভবনেও। দায় নিতে রাজি নয় কেউ।
জলাবদ্ধতা দূর করতে নতুন করে ড্রেন নির্মাণ করে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য তার উপর টাইলসের স্লাব বসানো হয়। এই কাজগুলোর তখন তদারকি করেছিল সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ।প্রকৌশল শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- ২০১৭ সালের টেন্ডারের ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসব কাজ শেষ হয় ২০২০-২০২১ সালের দিকে এসে। তাদের দেয়া নকশা মতো এ কাজ করেছিলেন ঠিকাদাররা।
শুধু জিন্দাবাজারই নয়, নগরের চৌহাট্টা, দরগা ও আম্বরখানা সহ কয়েকটি এলাকার দৃশ্যপটও একই।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখার তত্ত্বাবধানে নির্মিত এ কাজটি ভেঙে ফেলেছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মচারীরা।
কয়েকজন ঠিকাদার মানবজমিনকে জানিয়েছেন; সিসিক’র প্রকৌশল শাখা থেকে ড্রেনের ভেতরে ময়লা অপসারণের জন্য যে যে জায়গায় পয়েন্ট রাখা প্রয়োজন সেগুলো রাখাও হয়। কিন্তু চলতি মার্চ মাসের শুরুতে হঠাৎ করে সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বুলডোজার নিয়ে এসে ড্রেন ও স্লাব ভাঙা শুরু করেন। এরপর ভাঙা অংশ দিয়ে ময়লা তুলে রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা হয়। পরবর্তীতে সেগুলো সরিয়ে অন্যত্র নেয়া হয়েছে। কিন্তু ভাঙা ড্রেন ও স্লাব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েই গেছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন- ‘এই কাজগুলো এক বছর আগেই করা হয়েছে। ড্রেন ও স্লাব ভাঙার ব্যাপারে তার পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশ দেয়া হয়নি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মচারীরা সেগুলো ভেঙেছেন বা ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। এ ব্যাপারে তাকে কিছুই জানানো হয়নি।’ তিনি বলেন- ‘ড্রেন ও স্লাব নির্মাণের সময় পানি নিষ্কাশন ও ময়লা অপসারণের জন্য আলাদা আলাদা পকেট গেইট তৈরি করা হয়েছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এভাবেই নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু তাকে কিংবা তার শাখার কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ করে স্লাব ও ড্রেন ভাঙা হয়েছে।’ প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) একলিম আবেদীন জানিয়েছেন- ‘বৃষ্টির মৌসুম শুরু হচ্ছে। নগরের জলাবদ্ধতা নিয়ে সবাই শঙ্কায়। এই অবস্থায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখা প্রধান কাজ। এ কারণে স্লাব ভেঙে ড্রেনের পকেট অংশ দিয়ে ময়লা অপসারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি জানতেন।’
তিনি বলেন- ‘আমরা জরুরি প্রয়োজনে এই কাজ করতে হয়েছে। এখন সেটি সংস্কার করবে প্রকৌশল শাখা। তাদেরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এ ব্যাপারে অবগত নন বলে জানিয়েছেন। তিনি জানান এতে যদি কারও গাফিলতি থেকে থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে পথচারীরা যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- ড্রেন ও স্লাব ভাঙার বিষয়ে সিটি করপোরেশনের ভেতরেই সমন্বয়হীনতার অভাব দেখা যাচ্ছে। প্রকৌশল শাখা বিষয়টি জানে না। তার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখা ভেঙে ফেলেছে। আর রমজান ও ঈদ মৌসুমে এটি গলার কাঁটা হয়েছে পথচারীদের। আর এতে পড়ে মানুষ আহত হওয়ায় দেখা দিচ্ছে ক্ষোভও।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- ঈদ বাজারে জিন্দাবাজারে ভিড় হয় বেশি। মার্কেটে আসা মহিলারা রাতের বেলা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। গত শনিবার মার্কেটিংয়ে আসা লন্ডন প্রবাসী এক মহিলা স্লাব ও ড্রেনের ভাঙা অংশে পড়ে আহত হন। প্রতিদিনই পথচারীরা আহত হলেও সিটি করপোরেশন থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। নতুন করে প্রকল্প গ্রহণ না করা পর্যন্ত ড্রেন ও স্লাব আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। যদি সংস্কার করা হয় তাহলে ঝুঁকিপূর্ণই থাকবে। এতে অন্তত প্রায় ১০-১২ কোটি টাকার কাজ নষ্ট করে দেয়া হয়েছে বলে জানান তারা।