রাজনগর উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নের প্রেমনগর গ্রামে রাস্তা নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ১১ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন- মো. আছকির মিয়া (৬০), তাহের আলী (৫৫), ইশকার মিয়া (৬০), মোজাহিদ আলী (৫৩), তামিম আলী (১৬), কেনান মিয়া (৬৫), আছমা বেগম (৫০), মঙ্গল মিয়া (৬০), আব্দুল মুকিত (৫০), আপেল মিয়া (২৫), আলী হোসেন (৩০)।
এ নিয়ে গ্রামবাসী রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে অভিযোগও করেছেন। বিষয়টি নিষ্পতি করতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ওই এলাকায় সরেজমিন গিয়ে উভয়পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে তার অফিসে যেতে বলেন। কিন্তু কেউ সেখানে না যাওয়ায় বিষয়টি ঝুলে থাকে।
রাজনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এমদাদুল হক বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন জেনেছি। এখনো কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, অভিযোগ পেয়ে এসি ল্যান্ড সেখানে গিয়েছিলেন। রাস্তা নিয়ে দুই পক্ষের দুই ধরণের দাবি। কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। মারামারি করে ঘটনার সমাধান তো হবে না। আমরা বিষয়টি দেখব।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে উপজেলার প্রেমনগর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মো. হারুন আলীর সাথে সাধারণ মানুষের চলাচলের একটি রাস্তা নিয়ে প্রেমনগর, দক্ষিণ প্রেমনগর, সরকারী আশ্রয়ণ প্রকল্প ও মালিকোনা গ্রামবাসীর মধ্যে বিরোধ চলছে। রাস্তাটি নিজেদের মৌরুসী বলে হারুন আলী দাবি করে সেখানে বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। অপরদিকে চলাচলকারী লোকজন এটিকে সরকারী বলছেন।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী ওই গ্রামে যান। তারা মনসুরনগর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে ঘটনাস্থলে যেতে কল দিলে তিনি সেখানে যান। সেখানে জাহাঙ্গীর আলমকে হারুন আলীর লোকজন গালিগালাজ করেন।
এক পর্যায়ে উপস্থিত ৩টি গ্রামের মানুষের সাথে হারুন আলীর লোকজনের সংঘর্ষ বাধে। এতে উভয়পক্ষে ১১ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে সেনাবাহীনি ও রাজনগর থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
প্রেমনগর গ্রামের মো. আলিকুর রহমান বলেন, ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এই রাস্তা দিয়ে আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষরা চলাচল করছেন। এখন কয়েক বছর ধরে রাস্তাটি হারুন আলী নিজেদের দাবি করে বেড়া দিয়ে মানুষকে চলাচল করতে দেয় না। আমরা প্রশাসনের কাছে লিখিত দিয়েছি। তাকে বলার পরও সে কাগজপত্র নিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর অফিসে যায় না। আজ (শনিবার) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এলাকায় এলে তাকে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করে ও আমাদের উপর হামলা চালায়।
সাবেক ইউপি সদস্য হারুন আলী বলেন, রাস্তাটি আমাদের মৌরুসী। রাস্তার সাথে দুইদিকে সরকারী রাস্তা রয়েছে। তারা আগে গোপাট দিয়ে চলাচল করত। কিন্তু সেটি পরিত্যাক্ত হয়ে যাওয়ায় আমাদের রাস্তাকে তারা নিজেদের দাবি করে রাস্তাটি দখল করতে চায়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের নির্দেশে আমার বাড়িঘরে হামলা করে ৪ জনকে আহত করেছে। গরু ধরে নিয়ে গেছে। একটি গরুকে তারা দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করেছে।
মনসুরনগর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের সমস্যায় আমাকে কেউ ডাকলে যেতে হয়। রাস্তা নিয়ে হারুন আলী ও ৩ গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিবাধ চলে আসছে। কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী আমাকে যেতে বললে আমি ঘটনাস্থলে যাই। পরে হারুন আলীসহ তার লোকজন অকথ্য গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতার শিকার সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করলে সংঘর্ষ হয়।