রাইজিংসিলেট- মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে চেম্বার আদালতের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। এর ফলে নগদে প্রশাসকের কার্যক্রম পরিচালনায় আইনগত কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছে আইনজীবীরা। একই সঙ্গে আগামী ৩ জুলাই পযন্ত বিষয়টির ওপর শুনানি মুলতবি করেছে আদালত। এ সময়ের মধ্যে রিটকারীকে নিয়মিত লিভ টু আপিল দায়ের করতে বলা হয়েছে।
সোমবার (২ জুন) আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালেত বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন বি এম ইলিয়াস কচি। রিটকারীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জমির উদ্দিন সরকার ও নওশাদ জমির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
পরে বাংলাাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী বি এম ইলিয়াস কচি বলেন, নগদে প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে চেম্বার আদালতের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। এর ফলে নগদে প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত বহাল থাকল। আপিল বিভাগের আজকের আদেশের ফলে নগদে প্রশাসকের কার্যক্রম পরিচালনায় আইনগত কোনো বাধা নেই। একই সঙ্গে এ বিষয়ে রিটকারীকে নিয়মিত আপিল দায়ের করতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ৭ মে নগদ পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগের বৈধতা প্রশ্নের রিট খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে চেম্বার জজ আদালত। এই সময়ের মধ্যে আবেদনকারীকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। বিচারপতি মো. রেজাউল হকের চেম্বার জজ আদালত এই আদেশ দেয়।
সেদিন আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. জামিলুর রহমান।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের ২১ আগস্ট এক বছরের জন্য নগদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক অভ্যন্তরীণ আদেশে বলা হয়, ডাক বিভাগের ডিজিটাল আর্থিক সেবা ‘নগদ’-এ চট্টগ্রাম অফিসের পরিচালক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদারকে এক বছরের জন্য প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান, যুগ্ম পরিচালক আনোয়ার উল্লাহ, পলাশ মণ্ডল, আবু ছাদাত মোহাম্মদ ইয়াছিন, উপপরিচালক চয়ন বিশ্বাস ও আইয়ুব খানকে সহায়ক কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন নগদের আগের পর্ষদও ভেঙে দেওয়া হয়।
এরপর গত বছর ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের এই আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন নগদের নির্বাহী পরিচালক সাফায়েত আলম।
রিটে প্রাথমিক শুনানির পর ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দেয়। রুলে ২০০৪ সালের পরিশোধ ও নিষ্পত্তাব্যবস্থা আইনের ৩১(১) ও (২) ধারা প্রতিপালন না করে ‘নগদে’ প্রশাসক নিয়োগের গত ২১ আগস্টের মেমো (আদেশ) কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের পরিচালক, ডাক বিভাগের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংক নিযুক্ত নগদের প্রশাসক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এই রুলের চূড়ান্ত শুনানির পর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রিটটি ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ বলে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ খারিজ করে রায় দেয়।
পরে হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন সাফায়েত আলম। এরপর গত ৭ মে আপিল বিভাগের চেম্বার হাইকোর্টের রায়টি আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। পাশাপাশি ওই সময়ের মধ্যে লিভ টু আপিল দায়ের করতে বলা হয়। পরে চেম্বার আদালতের আদেশ বাতিল চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চেম্বার আদালতের দেওয়া আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ এ আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।