
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর ছুরিকাঘাতে দশম শ্রেণির পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ঘটনার পর এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের মাধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গাজীপুরের শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে বরমী ইউনিয়নের গাড়ারন খলিলিয়া বহুমুখী ফাজিল মাদরাসা মাঠের উত্তর-পূর্ব পাশে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত সিয়াম (১৪) বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর গ্রামের শাহজাহানের ছেলে এবং গাড়ারন খলিলিয়া বহুমুখী ফাজিল মাদরাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক রয়েছে।
আহত শিক্ষার্থীরা হলো- উপজেলার কাওরাইদ গ্রামের মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে রিফাত (১৫), শ্রীপুর পৌরসভার কাজীপাড়া এলাকার নয়ন মিয়ার ছেলে নাজিম উদ্দিন (১৫), বরমী ইউনিয়নের গাড়ারন গ্রামের লিটন মিয়ার ছেলে নিলয় (১৫), নূরুল্লাহর ছেলে মুহীন উদ্দিন (১৫), এবং একই গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে রিফাত (১৫)। তারা গাড়ারণ খলিলিয়া বহুমুখী ফাজিল মাদরাসার দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদরাসার এক শিক্ষার্থী বলেন, বুধবার (২৬ নভেম্বর) গাড়ারণ খলিলিয়া বহুমুখী ফাজিল মাদরাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিয়াম পরীক্ষা শেষে শ্রেণিকক্ষে বসে উল্টো হয়ে পেছনের টেবিলে কয়েকজন মেয়ে শিক্ষার্থীদের দিকে তাকিয়েছিল। ওই সময় মেয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলছিল। এ সময় আহতদের একজন তাকে জিজ্ঞেস করে তুই এখনো বসে রইলি কেন? পরীক্ষা শেষ হয়েছে বাড়িতে চলে যা। পরে সিয়াম তাকে বলে তোর বাবার স্কুল? একপর্যায়ে সিয়ামের সাথে ওই শিক্ষার্থীর তর্ক হয়। পরীক্ষা শেষে সিয়ামসহ তারা কয়েকজন স্কুলের পাশেই দাঁড়িয়ে গল্প করছিল। এ সময় সিয়ামকে একজন ধাক্কা দিলে সে স্যারদের কাছে বিচার দেয়। স্যারেরা ওইদিন মীমাংসা করে সবাইকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
সে আরও জানায়, বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) পরীক্ষা শুরুর আগেই সিয়াম বাসা থেকে ছুরি নিয়ে মাদরাসায় আসে। একপর্যায়ে সিয়াম মাদরাসার ছাদে উঠলে ম্যাডাম তাকে ছাদ থেকে নামিয়ে জিজ্ঞাসা করে আজকে তোমার পরীক্ষা নেই, তুমি মাদরাসায় আসছো কেন? এ কথা বলে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় এবং আমাদের সবাইকে পরীক্ষা হলে প্রবেশ করায়। সিয়াম বাড়িতে না গিয়ে পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত মাদরাসার উত্তর-পূর্ব পাশে (তিন ঘণ্টা) অপেক্ষা করে। পরীক্ষা শেষ হলে সিয়ামের কাছে ছুরি থাকার কথা শুনে নাজিম উদ্দিন তার কাছে গিয়ে বলে তুই বলে বাড়ি থেকে ছুরি নিয়ে আইছচ? পরে তার শরীরে চেক করার সময় সিয়াম ছুরি বের করে নাজিমকে ছুরিকাঘাত করে। এ সময় তাকে উদ্ধার করতে যাওয়া চার শিক্ষার্থীকেও ছুরিকাঘাত করে। পরে স্কুলেই পাশের সড়কে আগে থেকেই সিয়াম একটি অটো দাঁড় করে রেখেছিল। ঘটনার পর সে দৌড়ে ওই অটোতে উঠে দ্রুত চলে যায়।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক নাসরিন জামান বলেন, শরীরে ছুরিকাঘাত অবস্থায় পাঁচজন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে স্বজনেরা। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত কাওরাইদ গ্রামের মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে রিফাত, নাজিম উদ্দিন এবং মুহীন উদ্দিনকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি দুইজন প্রাথমিক চিকিৎসার পর বাড়িতে চলে গেছে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ বলেন, ঘটনাটি শুনে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তদন্ত করে অভিযুক্তকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, আমি মৌখিকভাবে শুনেছি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিকেল পর্যন্ত এ বিষয়ে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পাওয়ার পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।