নয়ন মৃত্যুর আগে, নির্যাতনের সময় কাতরাতে কাতরাতে পানি চেয়েছিলেন কিন্তু দেওয়া হয়নি তাকে পানি।
জীবনযুদ্ধে নেমে ছিল গরিব পরিবারের সন্তান নয়ন । কিছুদিন আগে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার ইউনিটের নির্মাণাধীন ভবনে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু চুরির অপবাদে নেমে আসলে নির্যাতনের খড়গ, আহত অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করতে করতে ত্যাগ করতে হলো শেষ নিঃশ্বাস।
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার আবদুল জলিলের ছেলে নয়ন মিয়া (২০)।
শুক্রবার (৯ জুন) সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে ওসমানী হাসপাতালের ক্যানসার ইউনিটের নির্মাণাধীন ভবনে কর্মরত নয়ন মিয়া ও আইয়ুব আলী নামের দুই শ্রমিককে চুরির অভিযোগে একটি রুমে নিয়ে ব্যাপক মারধর করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। পরে আহত অবস্থায় সকাল সোয়া ৯ টার দিকে নয়নকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে আরও এক শ্রমিককে হাত-পা বাধা অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে নয়নের বাবা আবদুল জলিল বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- কুড়িগ্রামের কচাকাঁটা থানার নারায়ণপুর গ্রামের আমিনুল ইসলাম, আয়নাল, সাবান আলী, দিনাজপুরের বিরল উপজেলার তেঘরা গ্রামের রুবেল মিয়া ও বগুড়া শিবগঞ্জের আবদুর রাজ্জাক।
৫ জন গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহম্মদ আলী মাহমুদ। তিনি জানান- নিহতের লাশ ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে, শুক্রবার সকালে নয়নকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে নির্যাতনের শিকার আরেক শ্রমিকের তথ্য পাওয়া যায়। পরে নির্মাণাধীন ভবন থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আইয়ুব আলী নামের ওই শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আইয়ুব আলী বলেন, ‘নয়ন মারা যাওয়ার আগে পানি চেয়েছিল, কিন্তু নির্যাতনকারীরা তাকে পানি পর্যন্ত খেতে দেয়নি।’
ভবনে কাজ করা ফজলুল হক নামের এক নির্মাণশ্রমিক বলেন, নির্মাণাধীন ভবনের ঠিকাদারের লোকজন থাকেন। তাঁদের ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আর মুঠোফোন চুরির অভিযোগ এনে শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে একটি কক্ষের দরজা বন্ধ করে শুধু সন্দেহের জেরে নয়ন ও আইয়ুব আলীকে নির্যাতন করা হয়। নয়ন গত বৃহস্পতিবার থেকে নতুন কাজ শুরু করেছিলেন। আর তাঁকে এনেছিলেন আইয়ুব আলী।
নয়নের বাবা আবদুল জলিল বলেন, দুই ছেলে, তিন মেয়ের মধ্যে নয়ন দ্বিতীয়। কাজের জন্য বাড়ি থেকে তাঁর ছেলে বের হয়েছিল। শুক্রবার সকাল থেকে তাঁরা ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। এরপর স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে নয়নের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারেন।
জানা যায়, হাসপাতালের ভবনটি নির্মাণ করছে এম জামাল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানই সিলেট সিটি করপোরেশনের ১২তলা ভবনের নির্মাণকা করছিলো। গত ৩ জুন সিটি করপোরেশনের নির্মাণাধীন ভবনের উপর থেকে লোহার পাইপ নিচে পড়ে সিটি সুপার মার্কেটের ভেতরে থাকা এক সেনাসদস্যের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিককে আসামি করা হয়।
১৯ বার পড়া হয়েছে।