নয়াবস্তি এলাকায় ৪ একর ভূমির দখল নিয়ে স্বপন ও শাহপরাণের দুই গ্রুপের মারমারি ।
কোয়ারি থেকে বালু-পাথর লুটের মহোৎসব চলছে। ৫ আগস্টের পর বদল হয়েছে খেকো-মালিকানা। বর্তমানে যারা লুট করছেন, তাদের বিরুদ্ধে হয়েছে একাধিক মামলা। তবে কিছুতেই থামছে না তাদের দৌরাত্ম্য।
অনেক সময় ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের মধ্যেও মারামারির ঘটনা ঘটছে। এমনই চিত্র দেখা গেছে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর)।
৩নং জাফলং ইউনিয়েনের নয়াবস্তি এলাকায় ৪ একর ভূমির দখল নিয়ে সোমবার দুপুর ও সন্ধ্যার পরে এ মারামারি ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শাহ আলম স্বপনের নেতৃত্বে ভূমি দখল করতে গেলে রফিকুল ইসলাম শাহপরাণের পক্ষের লোকজনের সাথে বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। পরে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এ নিয়ে উভয়পক্ষ রাতে ফের মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। এসব ঘটনায় এখনো এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা তৈরি হয়েছে।
তবে রফিকুল ইসলাম শাহপরাণের পক্ষের মো. ইউসুফ আলী নামক একজন শাহ আলম স্বপন ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, বালু-পাথর লুটকাণ্ডে সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কৃত হওয়া রফিকুল ইসলাম শাহপরাণ ও জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম স্বপনের মধ্যে বালু-পাথর উত্তোলনের জায়গা নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে প্রায়ই এক পক্ষ আরেক পক্ষকে নানা ধরনের হুমকি দিয়ে আসছেন। চলছে উত্তেজনা। এরই জের ধরে সোমবার দিন ও রাতে কয়েক দফায় দু’পক্ষ মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমেদ মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বলেন- অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন ও এর দখল নিয়ে রফিকুল ইসলাম শাহপরাণ ও শাহ আলম স্বপনের লোকজনের মারমারি হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেনি। করলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ওই সময় বালু-পাথর লুটপাটের সঙ্গে বিএনপির সিলেট জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরান জড়িত থাকার বিষয়টি আছেন মর্মে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে ১৪ অক্টোবর অভিযুক্ত বিএনপি নেতার পদ স্থগিত করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
অপরদিকে, দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিগত উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম স্বপনকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয়েছিল।
অভিযোগ রয়েছে- ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপিন্থী প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে জাফলং থেকে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন শুরু হয়। ৫ আগস্টের পরপরই জাফলংয়ের একটি এলাকায় জড়ো করে রাখা ১০০ কোটি টাকার পথর লুট হয়। এ ঘটনা জড়িত থাকায় বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম শাহপরাণকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেয় দল। তবু থেমে থাকেনি তার দৌরাত্ম্য। চালিয়ে যাচ্ছেন বালু-পাথর লুটপাট। লুটের নেতৃত্বে রয়েছেন আরেক সাবেক বিএনপি নেতা শাহ আলম স্বপন।
এসব অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও দায়ের করা হয়েছে। গত ১৮ অক্টোবর পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মো. বদরুল হুদা বাদী হয়ে ৯২ জনকে আসামি করে গোয়াইনঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এর আগের দিন একই দপ্তরের পরিদর্শক মামুনুর রশিদ বাদী হয়ে ২২ জনকে আসামি করে সিলেটের বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (পরিবেশ) মামলা দায়ের করেন। এই দুটি মামলায় সাবেক এই ২ বিএনপি নেতাসহ ১১৪ জনকে আসামী করা হয়।