সিলেটের সন্তান নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীকে নিয়ে ফের তোলপাড় শুরু হয়েছে। বেশ গুঞ্জন উঠেছে তিনি বেঁচে থাকার। কিন্তু তিনি জীবিত না মৃত- এ বিষয়ে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো পরিষ্কার বক্তব্য আসেনি।
এ নিয়ে বুধবার (২১ আগস্ট) সকালে সঙ্গে কথা হয় ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা’র।
এ বিষয়ে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা মুঠোফোনে বলেন- ‘বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বলতে আমি ক্লান্ত। যারা গুজব ছড়াচ্ছে তারাই ভালো জানে এমনটি কেন করছে। আমরা শুধু পরিবারের পক্ষ থেকে বলছি তাঁর (ইলিয়াস আলী) দোয়া করতে। আমাদের এখনো দৃঢ় বিশ্বাস- তিনি বেঁচে আছেন। প্রথম থেকেই আমরা এ আশা পোষণ করে আসছি। তাই সব সময় তাঁর সুস্থতার জন্য বিভিন্ন স্থানে দোয়া করিয়েছি বা করাচ্ছি।’
এর আগে মঙ্গলবার রাতে তাহসিনা রুশদীর লুনা তাঁর ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেন- ‘মিথ্যা বা কোন প্রকার গুজবে কান দিবেন না। প্রিয় ইলিয়াস আলীর জন্য দোয়া করবেন।’
জানা যায়, মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) মাগরিবের নামাজের পর সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার গহরপুর জামেয়া মসজিদে ইলিয়াস আলীর পারিবারিক উদ্যােগে তার সুস্থতা কামনায় খতমে বুখারি ও দোয়া মাহফিল হয়েছে। এতে বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপি এবং তার অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম জানান, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত এম ইলিয়াস আলীর ছোট ভাই মো. আছকির আলী গহরপুর জামেয়া মসজিদে ইলিয়াস আলীর সুস্থতা কামনায় খতমে বুখারি ও দোয়া করিয়েছেন। কারণ- নিখোঁজ হওয়ার আগ পর্যন্ত গহরপুর মাদরাসার সঙ্গে ইলিয়াস আলী ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন। তাঁর ভাই জানিয়েছেন- ইলিয়াস আলী বিদেশের একটি হাসপাতালে গুরুত্বর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন। তবে কোন দেশের হাসপাতালে সেটি জানাননি।
দোয়া মাহফিলের পর এর ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে এবং ‘ইলিয়াস আলী বেঁচে আছেন’ এমন কথা ছড়াতে থাকেন বিএনপি নেতাকর্মীসহ অসংখ্য মানুষ।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানীর বাসায় ফেরার পথে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি এম. ইলিয়াস আলী। এরপর কেটে গেছে এক যুগেরও বেশি সময়। ইলিয়াস আলী জীবিত না মৃত সে খবর কেউ দিতে পারেনি দীর্ঘ এই সময়ে।
স্বামীকে ফিরে পেতে সন্তানদের নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ছুটে গিয়েছিলেন ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনা। শেখ হাসিনা আশ্বস্ত করলেও শেষ পর্যন্ত কথা রাখেননি। ইলিয়াসের তথ্য জানতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েও স্বামীর সন্ধান পাননি লুনা।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর রহস্যময় আয়নাঘর থেকে মুক্তি পান নিখোঁজ কয়েকজন। ফেসবুকে কয়েকবার গুঞ্জন ওঠে আয়নাঘর থেকে ইলিয়াস আলী ফিরে এসেছেন। পরে এ গুঞ্জন গুজব বলে প্রমাণিত হয়।
নতুন করে গুঞ্জন উঠেছে ইলিয়াস আলী বেঁচে থাকার। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করে কোনো বক্তব্য আসছে না। মঙ্গলবার গহরপুর মাদরাসায় তাঁর ভাইয়ের পক্ষ থেকে ‘ইলিয়াস আলী বিদেশের একটি হাসপাতালে গুরুত্বর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন’ এমন কথা বলে দোয়া করানোয় রহস্য আরও ঘনিভূত হয়েছে।
এর মধ্যে মাসুদ রানা নামে এক ব্যক্তি নিজেকে র্যাব সদর দপ্তরে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশের এসআই দাবি করে ফেসবুকে জানান, ইলিয়াস আলীকে হাসিনা সরকার খুন করে সাগরে লাশ ফেলে দিয়েছে। তবে বিএনপি নেতারা মনে করেন ইলিয়াস এখনো বেঁচে আছেন এবং শেখ হাসিনা সরকারের কোনো গোপন আস্তানায় বন্দি আছেন।