নিজের পকেটে মাদক রেখে নিরোপরাধ পথচারীকে ফাঁসানোই যার প্রধান কাজ। কথামতো টাকা না পেলে নিজের কাছে রক্ষিত মাদক দিয়ে তল্লাসীর নামে পথচারীকে নির্জন স্থানে ডেকে নিয়ে, সেই মাদক পথচারির পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে, কালো রংয়ের গাড়িতে তুলে নিয়ে টাকার বিনিময়ে দফারফা করে ছেড়ে দেন। তার চাহিদামতো টাকা দিতে না পারলে সেই পথচারিকে মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে থানা হেফাজতে পাঠান সিলেট জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা রুহুল আমিন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে কর্মরত আছেন দীর্ঘ চার বছর থেকে। সেই চার বছরে কমপক্ষে ১০ জন নিরোপরাধ ব্যক্তিকে মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন তিনি। এরকম অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধানে নামে দৈনিক সকালের সময়। অনুসন্ধানের শুরুতেই মিলে চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রতিদিন সিলেট নগরীর বন্দরবাজার, জেলরোড, সোবহানিঘাট, মহাজনপট্টি, রংমহল টাওয়ারের সামনে কালো রংয়ের হাইয়েস গাড়ি নিয়ে ঘাপটি মেরে রাস্তায় কিংবা ফুটপাথের বিভিন্ন দোকানে উৎপেতে থাকেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে একাধিক টিম। কিন্তু আইনতো রয়েছে যে তাদের সাথে সেই অভিযানে থাকবেন একজন নির্বাহী ক্ষমতা সম্পন্ন ম্যাজিষ্ট্যট, বা সিনিয়র কোন ওসি পদমর্যাদার কর্মকর্তা। কিন্ত সম্প্রতিকালের তাদের সেই সব অভিযানে এমন কাউকে দেখা যায় না।
মাদকমুক্ত সমাজ সকল নাগরীকের প্রত্যাশা, অনেকে তাদের অভিযানকে স্বাগত জানান। কিন্ত সেই সব অভিযানে থাকেন সাব-ইন্সপেক্টর রুহুল আমিনের মতো অর্থপিপাসী কতিপয় দু-একজন কর্মকর্তা। যখন অন্য সবাই মাদক উদ্ধার বা মাদক ব্যবসায়ী আটকে ব্যস্থ সময় পার করেন। তখন সুযোগ সন্ধানী রুহুল আমিন থাকেন নিজের পকেটে থাকা মাদক দিয়ে অন্যকে ফাঁসানোর প্রচেষ্টায়। কতিপয় এই অসাধু কতিপয় কর্মকর্তার নিজের মাদক দিয়ে নিরিহ ব্যবসায়ীদের। পথচারীকে প্রায়ই নাজেহাল করে থাকেন। তল্লাসীর নামে নির্জন স্থানে বা সঙ্গে থাকা কালো গøাসের গাড়িতে পথচারীকে উঠিয়ে মাদক উদ্ধারের বদলে উল্টো মাদক দিয়ে নিরিহ ঐ পথচারিকে ফাঁসিয়ে দেন তিনি। এমন অভিযোগের সত্যতা মিলে অনেক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে। যদিও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পোষাক রয়েছে। কিন্তু সিলেট বন্দরবাজারে যারা অভিযান চালান তারা কখনো তাদের এইসব নির্ধারিত পোষাক ব্যবহার করেনা রহস্যজনক কারণে।
গত মঙ্গলবার বন্দরবাজারের রংমহল টাওয়ারস্থ নিজ অফিসের সামনে এরকম একটি ঘটনার ঘটলে উৎসুক জনতা জড়ো হতে থাকেন মার্কেটের সামনে। সাদা পোষাকে থাকা কয়েকজন লোক তিন-চারজন পথচারিকে তল্লাসীর নামে আটক করে নিজেরদের পরিচয়পত্র গোপন করে কালো রংয়ের একটি কালো গøাসের হাইয়েস মাইক্রোবাসে উঠানোর জন্য দস্তাদস্তি করছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানেনা কারা, কাকে আটক করছেন, বা সাদা পোষাক ধারীরাই বা কারা? সে সময় রংমহল টাওয়ারস্থ অফিস থেকে সিলেট সিটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আব্দুল হালিম সাগর বের হলে দৃশ্যটি দেখে অভিযানিক দলের সদস্য রহুল আমিনের কাছে তাদের পরিচয় জানতে চান। যে, আপনারা কারা ডিবি, র্যাব না মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এই প্রশ্ন করার সাথে-সাথে সাদা পোষাকে থাকা রহুল আমিন নিজের পরিচয় না দিয়ে উল্টো ঐ সাংবাদিকের উপর উত্তেজিত হয়ে যান। উল্টো তিনি ঐ সাংবাদিকের কাছে তার পরিচয় জানতে চান। তিনি সাংবাদিক পরিচয় দিলে রুহুল আমিন ঐ সাংবাদিকের পরিচয়পত্র ও ভিজিটিং কার্ড দেখতে জবরদস্তি শুরু করেন। তখন তিনি পরিচয়পত্র ও ভিজিটিং কার্ড দেখে নিশ্চিত হন। আটককৃতদের কাছ থেকে কোন রকম রিকোভারী আছে কিনা এটা জানতে চাইলে রুহুল আমিন ঐ সাংবাদিককেই নাজেহাল করতে একা তার সাথে মশরফিয়া নামক হোটেলে পাশ দিয়ে কাষ্টঘরগামী একটি নির্জন গলির ভিতরে ডেকে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু তখনো নিজের পরিচয় দিতে চান না সাদা পোষাকধারী রুহুল আমিন। সে সময় তাৎক্ষনিক অভিযানিক দলের পরিচয় নিশ্চত হতে ঐ সাংবাদিক এসএমপির ডিবির সদ্যবিদায়ী ভারপ্রাপ্ত ডিসি ও এসএমপি দক্ষিণ জোনের ডিসি মো.সোহেল রেজাকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি অবহিত করেন। সে সময় সোহেল রেজা নিজের পরিচয় দিয়ে সাদা পোষাকধারীর রহুল আমিনের কাছে তার পরিচয় জানতে চান। কিন্তু রহুল আমিন, তিনি নিজের পরিচয় দিতে চাননি ঐ পুলিশ কর্মকর্তাকেও। তাকে কেন প্রশ্ন করা হলো, সেই অযুহাতে সাংবাদিকের সাথে বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন তিনি রুহুল আমিন। এ সময় খবর পেয়ে বেশে কয়েকজন সাংবাদিক জড়োহন ঘটনাস্থলে। পরে বাধ্য হয়ে পকেট থেকে ভাজ করা একটি আইডি কার্ড বের করে নিজেকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাব-ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন হিসাবে পরিচয় দেন তিনি। জানান, ম্যাজিস্ট্রেট সাথে নিয়ে তারা ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছেন। কিন্তু ম্যাজিষ্ট্রেট কোথায়, জানতে চাইলে তিনি আরো ক্ষেপে যান। কোন রকম সদুত্তর না দিয়ে সাংবাদিকদের ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমান আদালতের হুমকি দেন। অনেকক্ষণ দাড়িয়ে কোন ম্যজিস্ট্রেট না আসলে বিষয়টি নিয়ে খটকা লাগলে উপস্তিত সাংবাদিকরা বন্দরবাজার ফাঁড়ির আইসি সাজেদুল করিম সরকারকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি ফাঁড়ির টহলটিমের দায়িত্বে থাকা এএসআই মাসুক আহমদসহ পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পাঠান। কিন্তু এর আগেই আটককৃতদের নিয়ে সটকে পড়ে কালো গøাসের মাইক্রোবাসটি। চুপিচুপি রুহুল আমিনের সাথে থাকে অভিযানকারী দল স্থান ত্যাগ করেন। কিছুক্ষণ পর ফোন দিয়ে অভিযানে সাথে থাকা একজন সাদাপোষাকধারীকে নিয়ে আসেন। তিনি এসে নিজেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর পরিচয় দিয়ে রুহুল আমিনের এহেন কান্ডের জন্য দু:খ প্রকাশ করেন সাংবাদিকদের কাছে।
এদিকে সরেজমিন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্মকর্তারা বন্দরবাজার এলাকায় নিয়মিত অভিযান চালায়। রুহুল আমিন নামের ঐ কর্মকর্তা প্রায়ই নিরিহ পথচারিকে আটক করে কাষ্টঘরের ঐ নির্জন রাস্তায় ডেকে নিয়ে নিজের সাথে থাকা মাদক পথচারির পকেটে ঢুকিয়ে পথচারীর কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেন, মাদক দিয়ে চালানের ভয় দেখিয়ে এমন অভিযোগ অনেক দিনের।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন ব্যবসায়ী বলেন, রুহুল আমিন নিজের পকেটে ইয়াবা রেখে বন্দরবাজারস্থ মশরাফিয়া হোটেলের পাশের গলির ভিতরে পথচারিদের ডেকে নিয়ে নিয়মিত পথচারির পকেটে মাদক ঢুকিয়ে টাকা পয়সা-হাতিয়ে নেন এটা নিত্য নতুন বিষয় নয়। নিজের চাহিদা মতো ধান্দা করতে না পারলে পরে, পরে দলের অপর সদস্যদের ডেকে বলেন, ঐ লোকের কাছে মাদক পাওয়া গেছে। দীর্ঘ চার বছর থেকে রুহুল আমিন সিলেটে কর্মরত থেকে এভাবে আইনকে প্রশ্নবৃদ্ধ করে নিজের বাণিজ্য ঠিক রেখে চলছেন। সিলেটে নাকি তার পরিচিত কয়েকজন সাংবাদিক তাকে এ কাজে শেল্টারও দেন। রহুল আমিনের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়টি সাথে থাকা অভিযানিক দলের অপর সদস্যরাসহ ‘খ’ সার্কেলের পরিদর্শক নজিব আলী বুঝতে পেরে তারা উপস্তিত সাংবাদিকদের কাছে দু:খ প্রকাশ করে তাদের শান্তনা দিয়ে একটি সিএনজি যোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
সূত্র-সিলেট এইজ