
সোমবার (২৪ নভেম্বর) ভোররাতে কুষ্টিয়ায় তার নিজ বাড়ি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সংস্কৃত বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী মোছা. সুমি খাতুনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা গেছে, আত্মহত্যার আগে সুমি একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়েছিলেন। সে পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, `SORRY 2 ME….’ যার মানে হল- ‘আমি নিজের কাছে নিজেই দুঃখ প্রকাশ করছি অর্থাৎ আসলে আমার কিছুই করার ছিলনা’।
সুমি খাতুন ২০১৮-১৯ সেশনের সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী ও কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া এলাকার গোলাপ রহমানের মেয়ে ছিলেন।
সুমির সহপাঠীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিরল রোগ ফাইব্রাস ডিসপ্লেশিয়াসহ গুরুতর শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন সুমি। এ রোগের কারণে তার হাঁড় ক্ষয় গিয়েছিল এবং একাধিকবার অস্ত্রোপচার করলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে তীব্র ব্যথা, চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা ও শারীরিক দুর্বলতার কারণে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। অসুস্থতা সত্ত্বেও সুমি সবসময় চেষ্টা করতেন স্বাভাবিক জীবনযাপন ও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। বিভিন্ন ডাক্তার ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও স্থায়ী সমাধান মিল ছিল না।
তারা আরও জানান, পরিবারের জন্য কিছু করতে না পারার আক্ষেপ এবং ক্রমাগত যন্ত্রণায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। একা একাই লড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামলাতে পারেননি বলে তাদের ধারণা।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সুমি নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তার মরদেহটি ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
সুমির ছোট খালা মোসা. কাঞ্চনী জানান, আজ ভোর রাতে (ফজরের নামাজের আগে) সুমির বাবা ও মা তার রুমে মধ্যে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে দেখতে পেয়ে পরে রশি কেটে নামায়। সকালে পুলিশ এসে তার রোগের রিপোর্টগুলো দেখে যায় এবং তার বাবাকে সঙ্গে করে থানায় নিয়ে যায় এবং তাকে দাফন করতে বলা হয়। আজ বাদ যোহর তার জানাযা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে সুমি বেশ মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের ছাত্রী ছিলেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. অসীম সরকার।
তিনি বলেন, মেয়েটি খুব ভালো ও মেধাবী ছিল। অসুস্থতার কারণে এক বছর পড়াশোনায় বিরতিও দিতে হয়। তার এভাবে চলে যাওয়ার বিষয়টি আমরা মেনে নিতে পারছি না। আমরা বিভাগের সবাই শোকাহত। আর কোনো শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে যেন এমন না হয়।