রাইজিংসিলেট- অনেকেরই অভিজ্ঞতা রয়েছে—সারাদিন ভালো থাকার পর রাতে ঘুমাতে গেলেই শুরু হয় অস্বস্তিকর চুলকানি। কখনও তা এতটাই তীব্র হয় যে ঘুম ভেঙে যায় বা ঘুমই আসে না। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই সমস্যার নাম নকচার্নাল প্রুরাইটাস। এটি শুধু অস্বস্তি নয়, শরীরের ভেতরের কোনো গোপন সমস্যারও ইঙ্গিত হতে পারে।
এই লেখায় আলোচনা করা হলো—রাতে চুলকানির সম্ভাব্য কারণ, প্রতিকার, কী এড়িয়ে চলবেন এবং কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।
রাতে চুলকানির স্বাভাবিক কারণ
১. সার্কাডিয়ান রিদম বা দৈনিক জৈব ঘড়ি
রাতে শরীরের তাপমাত্রা ও রক্তপ্রবাহ বাড়ে, এতে ত্বকে উষ্ণতা তৈরি হয় যা চুলকানির অনুভূতি বাড়াতে পারে।
২. ত্বকের পানিশূন্যতা- রাতে শরীরের ত্বকে আর্দ্রতা কমে যায়, বিশেষ করে শুষ্ক আবহাওয়ায়। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে চুলকানি বাড়তে পারে।
৩. পোকামাকড়ের উপস্থিতি- বিছানায় থাকা বেডবাগ, উকুন, স্ক্যাবিস বা পিনওয়ার্মের মতো পোকামাকড় রাতে বেশি সক্রিয় থাকে এবং ত্বকে জ্বালা ও চুলকানির কারণ হতে পারে।
স্বাস্থ্যজনিত কারণ- চুলকানি শুধু বাইরের সমস্যা নয়, এটি অনেক সময় ভেতরের গুরুতর রোগের লক্ষণও হতে পারে। যেমন:
চর্মরোগ: একজিমা, সোরিয়াসিস, ছুলি, হাইভস
অঙ্গের রোগ: কিডনি, লিভার বা থাইরয়েডের সমস্যা
রক্তের সমস্যা: আয়রন ঘাটতির অ্যানিমিয়া
মানসিক সমস্যা: মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, স্কিজোফ্রেনিয়া
নিউরোলজিক্যাল সমস্যা: ডায়াবেটিস, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, শিংলস
রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম
ক্যানসার: যেমন লিউকেমিয়া বা লিম্ফোমা
অ্যালার্জি: খাবার, ওষুধ বা প্রসাধনীর প্রতিক্রিয়া
গর্ভাবস্থা: হরমোন পরিবর্তনের কারণে চুলকানি হতে পারে
ঘরোয়া প্রতিকার- রাতে চুলকানি কমাতে কিছু সহজ ও কার্যকর উপায়:
স্ট্রেস কমাতে ধ্যান, যোগব্যায়াম, প্রগ্রেসিভ মাসল রিলাক্সেশন অভ্যাস করুন
অ্যালকোহল-মুক্ত ময়েশ্চারাইজার দিনে ও রাতে ব্যবহার করুন
ঠান্ডা ভেজা তোয়ালে বা বরফের সেঁক চুলকানির জায়গায় দিন
লুকওয়ার্ম পানিতে ওটমিল বা বেকিং সোডা মিশিয়ে গোসল করুন
হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করে ঘরের আর্দ্রতা ঠিক রাখুন
পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং ঘুমের রুটিন মেনে চলুন।
যেসব এড়িয়ে চলবেন
উল বা রুক্ষ পোশাক এড়িয়ে সুতি বা সিল্কের পোশাক পরুন! ঘরের তাপমাত্রা ৬০–৬৫°F (১৫–১৮°C) রাখার চেষ্টা করুন। ঘুমের আগে ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন, পারফিউমযুক্ত প্রসাধনী বা সাবান এড়িয়ে চলুন ও ত্বক চুলকানো এড়িয়ে চলুন, নখ ছোট করে রাখুন।
চিকিৎসকের কাছে কবে যাবেন?
নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো থাকলে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন: চুলকানি দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে। ঘুমে ব্যাঘাত হলে ও ওজন হ্রাস, জ্বর, দুর্বলতা বা ত্বকে র্যাশ দেখা দিলে।
রাতে চুলকানি একটি সাধারণ সমস্যা মনে হলেও এটি শরীরের গভীর বার্তা দিতে পারে। প্রাকৃতিক কারণ থেকে শুরু করে জটিল রোগ পর্যন্ত—এর কারণ হতে পারে নানা কিছু। তাই অবহেলা না করে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনুন, সতর্ক থাকুন, আর প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।