মৌলভীবাজার জেলাকে বলা হয় প্রকৃতির লীলাভূমি। সেখানে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত সারি সারি চা বাগান, কমলগঞ্জে অবস্থিত এশিয়ার অন্যতম রেইন ফরেস্ট লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, বধ্যভূমি একাত্তরসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পর্যটন স্পট ঘুরে দেখতে ও অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঈদের ছুটির ৫ম দিনেও হাজার হাজার পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছিল পর্যটন নগরী। হোটেল রিসোর্ট মালিকরা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ হোটেল রিসোর্ট হাউসফুল হয়ে আছে।
সরেজমিনে ঈদের ৫ম দিন বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন চা বাগান ও পর্যটন এলাকা ও হোটেল রিসোর্ট ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সের লোকজন পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হোটেল রিসোর্টগুলোতে সময় কাটাচ্ছেন অনেকে। পর্যটন এলাকার চায়ের দোকান, রেস্টুরেন্টে ভিড় দেখা গেছে। শ্রীমঙ্গলের বধ্যভূমি একাত্তর, চা কন্যার ভাস্কর্য, ভাড়াউড়া চা বাগান, বিটিআরআই রাধানগর, সাত রং এর চায়ের দোকান, মনিপুরী পাড়া ইত্যাদি এলাকাসহ শ্রীমঙ্গল উপজেলার পার্শ্ববর্তী কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেকে শ্রীমঙ্গলে আসা পর্যটকরা ভিড় করেছেন। শ্রীমঙ্গল শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি দেখা যাচ্ছে পর্যটকদের। তাছাড়া চাদের গাড়িখ্যাত জিপ গাড়িগুলো নিয়ে পর্যটকদের উল্লাস করতেও দেখা গেছে।
টানা একমাস সিয়াম সাধনার পর পবিত্র ঈদুল ফিতরকে ঘিরে সবার মাঝে ছিল আনন্দের বন্যা। ঈদের টানা কয়েকদিনের ছুটি পেয়ে প্রকৃতির লীলাভূমিতে ছুটে এসেছেন হাজার হাজার মানুষ। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, হাতে হাত রেখে পরিবার আর প্রিয়জনদের নিয়ে ঈদের ছুটি উপভোগ করতে পেরে সবাই খুশি। এদিকে ঈদের ছুটি বলে কথা। নিজেদের মতো করে ঈদের দিনকে উপভোগ করতে শুধু রাজধানী ছাড়াও আশেপাশে জেলা থেকে মোটরসাইকেল, সিএনজি, মাইক্রোবাস প্রাইভেটকারে করে যুবক তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে ভিড় করেন দর্শনীয় স্থানগুলোতে।
মৌসুমী রহমান নামের একজন পর্যটক বলেন, চা বাগানে এসে ছবি তুললাম। এই প্রথম চা বাগানে আসা। যেদিকে যাচ্ছি, ভালো লাগছে। শ্রীমঙ্গল এসে ভালো সময় কাটলো।
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা শামীমা আক্তার বলেন, শ্রীমঙ্গলে এসে অনেক ভালো লাগলো। চারিদিকে সবুজ চা বাগানের ভিতর ঘুরে বেড়াচ্ছি। প্রশান্তি লাগছে। প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে মন চাচ্ছে।
চামুং রেস্টুরেন্টের পরিচালক পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, ঈদ উপলক্ষে স্থানীয়দের ভিড় ছিল ৫ম দিনও। পর্যটকরাও ছিল। আমরা ভালো পর্যটক ও স্থানীয়দের ভালো সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছি। এই ঈদের ছুটিতে ভালো বেচাকেনা হচ্ছে।
ট্যুর অপারেটর অ্যান্ড ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাসেল আলম বলেন, আজ ঈদের ৫ম দিন ছোট বড় সব রিসোর্টেই হাউসফুল। প্রচুর পর্যটক শ্রীমঙ্গলে ঈদ উপলক্ষে আমরা ট্যুর গাইডরা প্রচুর বুকিং পেয়েছি। এরমধ্যে বিদেশি পর্যটকরাও রয়েছেন। দেশের অন্যান্য অনেক জায়গায় পর্যটকরা ছিনতাই বা বিভিন্ন কারণে হয়রানির শিকার হলেও শ্রীমঙ্গলে আসা পর্যটকরা এখানে ছিনতাই বা হয়রানি শিকার হয়েছেন এমন ঘটনা ঘটেনি। এজন্য পর্যটকদের কাছে শ্রীমঙ্গল নিরাপদ জায়গা। আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাই, যাতে এভাবেই সব সময় পর্যটকদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়।
ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের পরিদর্শক মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, এবার ঈদের ছুটি বেশ লম্বা থাকায় প্রচুর পর্যটক সমাগম হয়েছে। আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে নজরদারি রাখছি। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ থানা পুলিশ, র্যাব, সাদা পোশাকেও আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে। পর্যটকরা যেন নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করে সুন্দরভাবেই বাড়ি ফিরতে পারে, আমরা সেভাবেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছি।
মৌলভীবাজার পর্যটন সেবা সংস্থা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সেলিম আহমেদ বলেন, ভারতের পর্যটন ভিসা ও সাজেক বন্ধ থাকায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে মৌলভীবাজারের দেড়শতাধিক পর্যটন স্পট ঘিরে এবার হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। অধিকাংশ হোটেল, রিসোর্টগুলো হাউসফুল রয়েছে। সব মিলিয়ে এবারের ঈদে ভালো ব্যবসা করবেন পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। এতে করে করে বিগত দিনের কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে।