সুনামগঞ্জ জেলার কয়েক হাজার জেলে প্রাকৃতিক উপায়ে শুঁটকি উৎপাদন করে পরিবারের সচ্ছলতা এনেছেন। চাহিদা বেশি থাকায় বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার শুঁটকি উৎপাদন করছেন এখানকার জেলেরা। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশেও রপ্তানি হচ্ছে হাওর এলাকার এসব শুঁটকি।
সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরের প্রাকৃতিক জলাশয় ও বিলে কার্তিক থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত ধরা পড়ে পুঁটি, চিংড়ি, ট্যাংরা, শোল, বাইমসহ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ।
শুঁটকি উৎপাদনের সঙ্গে শতাধিক ব্যবসায়ীর পাশাপাশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করছেন জেলার অন্তত ১০ হাজার মানুষ। এতে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি উপার্জনের মাধ্যমে তাঁদের সামাজিক অবস্থান তৈরি হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রতিবছর মাছের উৎপাদন ১ লাখ ১৪ টন। এর মধ্যে জেলার পুকুর, নদী ও প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে ৮৫ হাজার টন মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব মাছ থেকে বছরে ২ হাজার ১৮০ টন শুঁটকি হয়; যার বাজারমূল্য ৩০০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতি মণ শুঁটকির বাজারমূল্য প্রকারভেদে ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এই জেলার চ্যাপা শুঁটকির রয়েছে দীর্ঘ ঐতিহ্য। এ ছাড়া এখানকার অন্তত ১০ জাতের শুঁটকি ইউরোপ, আমেরিকা, ভারত, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এসব দেশীয় মাছের উল্লেখযোগ্য অংশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে শুঁটকি। এত কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না।
সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামসুল করিম বলেন, ‘শুঁটকির গুণাগুণ রক্ষায় প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শুঁটকি আন্তর্জাতিক বাজার তৈরিতে মৎস্য বিভাগ কাজ করছে। সুনামগঞ্জে শুঁটকি ব্যবসার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবছর এখানে যে শুঁটকি উৎপাদন হয়ে থাকে তার অর্থনৈতিক মূল্য কোনো অংশে কম নয়। এখানের শুঁটকি বিদেশ যাচ্ছে। শুঁটকির গুণগত মান রক্ষায় আমরা কাজ করছি।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের খাকিয়ারপাড় গ্রামের বাসিন্দা সুরুজ আলী। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে শুঁটকির ব্যবসার করে পরিবারে সচ্ছলতা এনেছেন তিনি। এ বছর ৭০০ মণ শুঁটকি উৎপাদন করে প্রায় ৩ কোটি টাকায় বিক্রি করেছেন এই ব্যবসায়ী। তাঁর শুঁটকিপল্লিতে ২০ জনের মতো শ্রমিক কাজ করছেন।
সুরুজ আলী বলেন, ‘আমি কার্তিক মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত শুঁটকির এই ব্যবসা করি। হাওরের জলমহালের মালিক ও জেলেদের কাছ থেকে মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি তৈরি করি। আমরা শুঁটকি প্রস্তুত করে কিশোরগঞ্জে পাঠাই। সেখান থেকে দেশ ও দেশের বাইরে এই শুঁটকি যায়। আমাদের শুঁটকি ইউরোপসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে যাচ্ছে।’
সুরুজ আলীর মতো শুঁটকি ব্যবসায় দীর্ঘ ৩২ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে নুরুল ইসলামের। নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার যদি কম সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে দিত, তবে ব্যবসায়ীরা আরও লাভবান হতে পারতেন। তা ছাড়া গ্রামীণ যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়ন করতে পারলে শুঁটকি পরিবহন ব্যয় কমে আসত।’