পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছেন ৫ আগস্ট সোমবার দুপুরে। তবে তার আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা। নেতাদের অনেকেই সিলেট সীমান্ত দিয়ে দেশ ছেড়েছেন বলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা গেছে।
সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশোওয়ার জাহান সৌরভ আছেন যুক্তরাষ্ট্রে, সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ ভারতে, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ রাহেল সিরাজ, এম.সি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি আহমদ আলী, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য আহমদ উদ্দিম সাজনসহ অনেকেই ৫ অগাস্টের পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
যারা পালিয়ে গেছেন বা পালানোর চেষ্টায় আছেন, তাদের প্রায় সবাই হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, সরকার পতনের এত দিন পরও কীভাবে এসব ব্যক্তি দেশ ছেড়ে পালাতে পারছেন।
ভারতে পালানোর সময় গত ২৩ আগস্ট সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তে স্থানীয় লোকজনের হাতে ধরা পড়েন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী (মানিক)।
২৪ আগস্ট রাতে সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর সময় মারা যান ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান (পান্না)। লাশ উদ্ধারের পর মেঘালয় পুলিশ সূত্র গণমাধ্যমকে বলেছে, গলা টিপে শ্বাসরোধের কারণে ইসহাকের মৃত্যু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কেউ কেউ অবৈধ পথে ভারতে গিয়ে দালালের মাধ্যমে পাসপোর্টে বাংলাদেশ থেকে বহির্গমন ও ভারতের প্রবেশের সিল লাগানোর ব্যবস্থা করছেন।
হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামিদেরও সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক নাইম আহমেদ বলেন, যারা ভারতে যাচ্ছেন, তারা তো আগে দেশের ভেতর দিয়েই সীমান্তে যান। তারা কীভাবে সীমান্তে যাচ্ছেন, সেটা জানা জরুরি। পাশাপাশি তল্লাশিচৌকি বসিয়ে নজরদারি জোরদার করতে হবে। এ ছাড়া সীমান্তে মানব পাচারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
দেশ ছেড়ে পালাতে গিয়ে আবার অনেকেই বিমানবন্দরে আটক হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মাহমুদ বিমান বন্দর থেকে আটক হন। প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছাড়তে বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করে দেশ ছাড়ছেন সিলেট ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকমীরা।
এদিকে পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়া কিংবা ইমিগ্রেশন সম্পন্ন না করে পলাতক ব্যক্তিদের বিষয়ে ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সহনশীল আচরণ করছে বলে জানা গেছে। তাদের কারও কারও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে বসবাসের অনুমতি (পিআর) বা গ্রিন কার্ড রয়েছে। তাদের কেউ কেউ ভারতের ইমিগ্রেশন বিভাগকে ‘ম্যানেজ’ করে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এই প্রক্রিয়ায় ভারত থেকে লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছেন বলে জানা গেছে।