অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান,এ বছরের শেষের দিকে মূল্যস্ফীতি কমে আসার ব্যাপারে আশাবাদী । তিনি বলেছেন, বাজেটের আকার আমরা কমিয়ে রেখেছি, যাতে দ্রব্যমূল্যের ওপর কোনো চাপ না পড়ে।
শুক্রবার (৭ জুন) বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। ওই বাজেটের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে।
মূল্যস্ফীতির এ সময়ে বাজেটে করমুক্ত আয় সীমা একই রেখেছেন, এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ে আমি বাজেট বক্তব্যে বলেছি, আমরা আশা করছি এ বছরের শেষের দিকে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে বাজেটের আকার আমরা কমিয়ে রেখেছি। যাতে করে দ্রব্যমূল্যের ওপর কোনো চাপ না পড়ে। দেখা যাক চেষ্টা তো করতে হবে।
ব্যাংকের তারল্যসংকটের সময়ে প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, এতে ব্যাংকে তারল্যসংকট হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া—এটা সব বাজেটেই সব অর্থমন্ত্রীরা করে থাকেন। সব সরকার করে থাকে। উন্নত দেশে আরও অনেক বেশি নিয়ে থাকে, আমরা তো মাত্র ৫ শতাংশের মধ্যে এটা ধরে রেখেছি। কাজেই এটা এতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। এটা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, কর আদায়ে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অটোমেশনের বিষয়টি শুরু হয়েছে। অর্থবিভাগ থেকে আমরা জনবল নিয়োগের বিষয়ে অনুমোদন পেয়েছি।
এনবিআরে জনবল বৃদ্ধির কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থসচিব খায়েকুজ্জামান বলেন, জনবল নিয়োগের বিষয়ে এনবিআর থেকে চিঠি এসেছিল। ইতোমধ্যে আমরা ব্যাপক জনবল বাড়িয়েছি। আশা করছি সামনে আরও বাড়ানো হবে।
সমুদ্র অর্থনীতি বিষয়ে বাজেটে কোনো উদ্যোগ আছে কি না, এমন প্রশ্নে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সুনীল অর্থনীতির গবেষণায় ও অন্যান্য বিষয়ের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
নতুন বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরে ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে দুই লাখ ৮৩ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরে ছিল পাঁচ লাখ কোটি টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, পরীকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার প্রমুখ।
বাজেটে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরে যা ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়। বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরা হয়েছে।