বন্ধুর ভাড়া বাড়ি থেকে রিকশাচালক হালিম শেখের (২৫) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
হালিম শেখ শহরের মধ্য আলিপুর মহল্লার বাসিন্দা মৃত আব্দুর রব শেখের ছেলে। দুই বোন, এক ভাইয়ের মধ্যে হালিম শেখ মেঝো।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে শহরের লক্ষ্মীপুর মহল্লার মডেল টাউন এলাকা থেকে বস্তাবন্দি এবং মাটিতে পুঁতে রাখা অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
রনি মোল্যা নরসিংদী জেলার কলাপাড়া রায়পুরা এলাকার আব্দুল মতিনের ছেলে। সুমির বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়েনদিয়া এলাকায়।
জানা গেছে, মোকলেছুর রহমানের বাড়ির রান্না ঘরের পেছন থেকে এই মরদেহটি উদ্ধার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। ওই বাড়িটি বর্তমানে হালিম শেখের বন্ধু রনি (২৬) এবং তার স্ত্রী সুমী (২৩) ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন।
পুলিশ জানায়, হালিমের চালিত রিকশাটি রনি যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সেই বাড়ির উঠানে একটি টিনের ঘর থেকে ভাঙাচোরা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে ওই টিনের ঘরের পূর্বদিকে বাড়ির টিনের বেড়ার সীমানা প্রাচীর এলাকায় বালু খুড়ে বস্তাবন্দি অবস্থায় হালিমের মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, মৃতের মাথায় আঘাতের চিহ্ন এবং গলাকাটা ছিল। তার দুই পা ভাজ করে একটি প্লাস্টিকের বস্তার মধ্যে হালিমের শরীর ঢুকিয়ে তাকে মাটিচাপা দেয়া হয়।
হালিম শেখের বোন সাথী আক্তার জানান, গত ৩১ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে তার ভাই বাড়ি থেকে রিকশা ভাড়া নিয়ে উপার্জনের জন্য বের হওয়ার পরে আর বাড়িতে ফিরে আসেনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে না পেয়ে গত ৩ জানুয়ারি তিনি ফরিদপুর কোতোয়ালী থানায় একটি ডায়েরি করেন।
বাড়ির মালিক মোকলেছুর রহমান জানান, রনি এবং তার স্ত্রী গত দেড় মাস যাবত এই বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করছিলেন। বাড়ি ভাড়া নেয়ার সময় তারা স্বামী-স্ত্রী ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ওয়ার্ড বয়ের কাজ করতো বলে জানিয়েছিল।
ওই রিকশার মালিক নূর ইসলাম জানান, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হালিম তাকে ফোনে জানায় সে রাতে গ্যারেজে যাবে না, এক আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে গেছে। পরের দিন ফিরবে। একপর্যায়ে আমরা জানতে পারি, হালিমের বন্ধু রনি মোল্যা তাকে ভাড়া করে নিয়ে যায়। পরে রনির বাড়িতে এসেই তার মরদেহ পেলাম।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল জানান, গত ৩১ ডিসেম্বর তারা একসঙ্গে মধ্য আলীপুরে একটি ওয়াজ মাহফিলের ওয়াজ শুনে রিকশা চালক হালিম তার বন্ধু রনির সঙ্গে চুনাঘাটার বাসায় আসে। এরপর থেকে তার সন্ধান না পেয়ে শুক্রবার কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করে তার পরিবারের সদস্যরা। এরপর হালিমের স্বজনদের সন্দেহের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে হালিমের মরদেহ উদ্ধার ও তার রিকশার সন্ধান মিলে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, লাশের ঘাড়ে কোপের চিহ্ন রয়েছে। সম্ভবত তাকে কুপিয়ে হত্যার পরে এখানে পুঁতে রাখা হয়। দ্রুতই রনিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) বলেন, এ ঘটনার পেছনে রহস্য আছে। নিহত হালিমের বন্ধু রনি পালিয়ে গেলেও তার স্ত্রী সুমী বেগম বাড়িতে ছিলেন। সুমি বেগম দরজা খোলাসহ পুলিশের কাজে সহযোগিতা করেনি বরং বাধা দিয়েছে। আমরা সুমী বেগমসহ দুজনকে আটক করে ফরিদপুর কোতোয়ালী থানায় নিয়ে এসেছি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।