রাইজিংসিলেট- সম্প্রতি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইরান-ইসরায়েল বৈরিতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। কারণ হামাসের প্রধান সহায়তাকারী হচ্ছে ইরান।
ইসরায়েল যখন হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তখন অনেকের মধ্যেই এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, এই যুদ্ধ হয়তো শেষ পর্যন্ত ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
ইরান ও ইসরায়েল এখন শত্রুতে পরিণত হলেও এক সময় পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। এই দুটি দেশ একে অপরের বন্ধু ছিল। ১৯৪৮ সালে যখন ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়, তখন তুরস্কের পর ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়া দ্বিতীয় মুসলিম দেশ ছিলো ইরান। ১৯৫০ সালে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় ইরান।
পরবর্তীতে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে গড়ে ওঠে অর্থনৈতিক, এমনকি সামরিক সম্পর্কও। ১৯৫৭ সালে যখন ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা ‘সাভাক’ প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এতে সহায়তা করেছিলো ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। ইসরায়েলের সঙ্গে ইরান সম্পর্ক ধরে রাখায় মনযোগী হয় মূলত মার্কিন সমর্থন নিশ্চিত করার জন্য।
তবে ইরানের সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখলেও ইরানের ভেতরে আগে থেকেই ইসরায়েল বিরোধিতা ছিলো। ইরানের শাহ শাসন বিরোধী বামপন্থীদের সঙ্গে ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলন ফাতাহ এবং এর নেতা ইয়াসির আরাফাতের যোগাযোগ ছিলো।
অন্যদিকে, আয়াতুল্লাহ খোমেনী এবং তার অনুসারীরাও ছিলেন ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে। তবে ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ক ভেঙ্গে পড়ে মূলত ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর।
তখন ক্ষমতায় আসা ইরানের বিপ্লবী সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ নেয়ার ঘোষণা দেয় এবং তেহরানে ইসরায়েলের দূতাবাসকে ফিলিস্তিনি দূতাবাসে পরিণত করে। তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। মূলত ইরানের বিপ্লবী সরকার ফিলিস্তিনে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব এসেক্স এর শিক্ষক এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্বাস ফয়েজ বলেন, ইরানি সরকারের ইসরায়েল নীতি পরিবর্তন হওয়ার কারণেই দুই দেশের সম্পর্ক বৈরি হতে শুরু করে।
তিনি বলেন, ইসলামি বিপ্লবের পর ইরান সরকার আমেরিকা এবং ইসরায়েলকে তার জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলো। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনকে সমর্থন দেয়ার নীতিও নিয়েছিলো।
অন্য আরব দেশগুলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দুই রাষ্ট্র সমাধানে একমত হলেও ইসলামি বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনী সেটা গ্রহণযোগ্য মনে করেননি। তারা ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে অস্বীকারের নীতি নেয়। অন্যদিকে ইরানের এমন উত্থানকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করে ইসরায়েল।
পরবর্তীতে ইরানের দূরপাল্লার মিসাইল তৈরির চেষ্টা এবং পরমাণু প্রকল্প গ্রহণের ফলে ইসরায়েল ইরানকে হুমকি হিসেবে দেখতে থাকে। ফলে তারা ইরানের সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিশেষত পরমাণু প্রকল্প ভেস্তে দিতে শুরু করে নানা অন্তর্ঘাতমূলত পদক্ষেপ। এসময় দেশটির একের পর এক বিজ্ঞানীকে ইসরায়েল হত্যা করেছে বলেই ইরানের অভিযোগ।
অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান তার প্রভাব বলয় বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়। লেবাননে ইরানের প্রত্যক্ষ সহায়তায় গড়ে ওঠে হিজবুল্লাহ। নব্বইয়ের দশকে হামাস এবং ইসলামিক জিহাদকেও সহায়তা করতে শুরু করে ইসরায়েল। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান এবং ইসরায়েল একধরনের আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ে।
যেটা দুই দেশের সম্পর্ককে আরো খারাপের দিকেই নিয়ে যায় বলে মনে করেন ইসরায়েলের তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডল ইস্টার্ন স্টাডিজের অধ্যাপক মেইর লিটভ্যাক।