রাইজিংসিলেট- প্রতি বর্ষায় সিলেটের প্রকৃতি নিজের রূপ আর স্নিগ্ধতা মেলে ধরে। নান্দনিক সৌন্দর্যের টানে তাই পর্যটকেরাও বর্ষায় ছুটে আসেন। তবে এবার বৃষ্টির মৌসুম শুরু হতে না-হতেই পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টিতে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। পর্যটনকেন্দ্রগুলোও হয়ে পড়ে পানিবন্দী।
হঠাৎ পর্যটকবান্ধবহীন এমন পরিস্থিতিতে ঘটে ছন্দপতন। তবে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাকতালীয়ভাবে পানি কমতে শুরু করে। পর্যটনকেন্দ্রগুলোও আবার হয়ে ওঠে মুখর। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা সিলেটে ছুটে আসছেন প্রকৃতির রূপ আর স্নিগ্ধতা উপভোগ করতে।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সিলেটের জনপ্রিয় সব কটি পর্যটনকেন্দ্রই পানিকেন্দ্রিক। তাই বর্ষা মৌসুমেই এসব পর্যটনকেন্দ্র ঘিরে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকে। এবার ঈদের ছুটিতেও প্রতিটি স্পটে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক আসছেন। যেহেতু এখনো পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি চলছে, তাই আগামী শনিবার পর্যন্ত পর্যটকদের এমন উপচে পড়া ভিড় থাকবে। এবারের ছুটিতে সিলেটে লাখো পর্যটক হবেন বলে ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান গণমাধ্যমে বলেন, আকস্মিক পানি চলে আসায় পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আশঙ্কায় ছিলেন, এবারের ঈদের ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক আসবেন না। তবে দ্রুত পানি নেমে যাওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এ অবস্থায় প্রচুর পর্যটক আসছেন। ঈদের আরও যে কয়েক দিন ছুটি আছে, একই অবস্থা থাকবে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার জল–পাথরের শয্যাখ্যাত সাদা পাথর এবং গোয়াইনঘাট উপজেলার জলাবন রাতারগুল (সোয়াম ফরেস্ট) ও জাফলং ঘিরেই পর্যটকদের উপস্থিতি থাকে বেশি। এর বাইরে গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি, মায়াবি ঝরনা, ডাউকি নদীর তীরের খাসিয়াপল্লি ও পানপুঞ্জি; জৈন্তাপুর উপজেলার নীল পানির নদখ্যাত লালাখাল, উঁচুনিচু টিলা, চা-বাগান, রাজবাড়ি, রাংপানি ও শ্রীপুর পিকনিক স্পট; ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার হাকালুকি হাওরেও পর্যটকেরা যাচ্ছেন। এ ছাড়া সম্প্রতি পরিচিতি পাওয়া গোয়াইনঘাটের সীমান্তবর্তী সবুজ পাহাড় আর জলপ্রপাতের এলাকা ‘নলজুড়ি’ ঘিরেও পর্যটকেরা ভিড় করছেন।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলেন, সিলেটে অসংখ্য চা-বাগানও পর্যটকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। এ ছাড়া ঈদের ছুটিতে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করতেও অনেকে সিলেটে আসেন। এবারের ছুটিতেও এ দুটো স্থানে উপচে পড়া ভিড়। মাজার জিয়ারতের পাশাপাশি হজরত শাহজালাল দরগাহে থাকা শাহজালালের চিল্লাখানা, কূপ, জালালি কবুতর, বৃহৎ আকৃতির গজার মাছ আর আগে ব্যবহৃত ডেকচিও অনেকে আগ্রহ নিয়ে দেখেন। শহরে অবস্থিত টিলাগড় ইকোপার্ক, এমসি কলেজ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কিনব্রিজ, আলী আমজদের ঘড়ি এবং মিউজিয়াম অব রাজাস (হাসন রাজা জাদুঘর) দেখতেও অনেক পর্যটক ভিড় জমান।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, সাদা পাথর ও জাফলংয়ে যাত্রীবাহী বাসে চলাচল করা সম্ভব। তবে দ্রুত সময়ে অনেক স্থানে ঘুরে বেড়ানোর জন্য একটি মাইক্রোবাস বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করলেই ভালো হয়। সাদা পাথর ও রাতারগুল পর্যটনকেন্দ্রে যেতে হলে নৌকা ভাড়া করতে হয়। পর্যটকদের ভোগান্তি দূর করতে স্থানীয় প্রশাসন নৌকা ভাড়া নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এ ছাড়া জাফলংয়ে নদীপথে ঘুরতেও প্রশাসন নির্ধারিত নৌকাভাড়া রয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগে বলেন, সিলেটে সব সময় পর্যটকদের ভিড় থাকে। তবে বিশেষ করে ছুটির সময়ে পর্যটকদের উপস্থিতি বেড়ে যায়। এটা বিবেচনায় নিয়ে ঈদের ছুটিতে জেলার সব কটি পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন তৎপর রয়েছে।