মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে প্রাগৈতিহাসিক তীর্থস্থান রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই সীতাঘাটে শ্রীশ্রী মাতা সীতা মন্দিরে মহাবারুণী স্নান উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এক মহাপূণ্যানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
আজ রবিবার ১৯ মার্চ ২০২৩ কাপ্তাইয়ের সীতা মন্দিরে মহাবারুণী স্নানের অনুষ্ঠানে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা হতে আগত সনাতনি সম্প্রদায়ের ভক্তরা ঐতিহাসিক কর্ণফুলি নদীতে স্নান, সীতা মন্দির, শম্ভুনাথ মন্দির, কালি মন্দিরে পুজা দেওয়া এবং মহাপ্রসাদ গ্রহনের মাধ্যমে মা সীতা দেবীর কাছে তাদের মনের বাসনা ব্যক্ত করেছেন। এ উপলক্ষে রবিবার সকাল হতে অষ্টপ্রহরব্যাপী তারকব্রহ্ম মহানামযজ্ঞ ও সীতা মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে একটি মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে সীতা মন্দির। ঐতিহাসিক এই মন্দিরে বিভিন্ন নির্দশন ঘুরে ফিরে দেখছেন ভক্তরা। মহাবারুণী স্নানে আসা অনেক ভক্ত জানান, ঐতিহাসিক এই পবিত্র তীর্থ স্থানে আসতে পেরে নিজেদেরকে পূণ্যবান বলে মনে করছেন তারা। আমরা মা সীতা দেবীর বিভিন্ন নির্দশন ঘুরে ফিরে দেখছি এবং মহাবারুণী স্নানে স্নাত হয়ে পবিত্র হচ্ছি। সীতাঘাট মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি রতন দাশ জানান, ঐতিহাসিক এই সীতা মন্দিরে দূর দূরান্ত হতে ভক্তরা আসছেন। সীতা মন্দির, শম্ভুনাথ মন্দির, কালি মন্দিরসহ মা সীতার বিভিন্ন ঐতিহাসিক নির্দশন দেখছেন ভক্তরা। গতকাল শনিবার হতে শুরু হয়ে আগামী সোমবার সকাল পর্যন্ত এই উৎসব চলবে।
মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দাশ জানান, এই মন্দিরে মা সীতার অনেক নির্দশন আছে। মা সীতা যে ঘাটে স্নান করেছেন আজ সে ঘাটে ভক্তরা স্নান করেছেন। এই স্থানে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে আমাদের অনেক প্রতিকূলতা সৃষ্টি হয়। এরপরও এমপি দীপংকর তালুকদার, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জেলা পরিষদ, উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সহায়তায় আমরা এই অনুষ্ঠান করতে পারছি।
শ্রীশ্রী মাতা সীতাদেবী মন্দিরের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ জ্যোতির্ময়ানন্দ পুরী মহারাজ জানান, এটি একটি প্রাগৈতিহাসিক তীর্থ স্থান। আমি বিশ্বের সকল ভক্তের কাছে অনুরোধ জানাই, সকলে মিলে এই তীর্থ স্থানকে জাগিয়ে তুলুন। এদিকে মহাবারুণী স্নান উপলক্ষে আজ রবিবার (১৯ মার্চ) বেলা ১২ টায় মন্দির প্রাঙ্গনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্প্রর্কীত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ২৯৯ নং আসনের সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থেকে বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ। আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সনাতন সম্প্রদায়সহ সকল ধর্মের মঠ মন্দিরের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছু
অবৈধ অস্ত্রধারী ও চাঁদাবাজ এই পার্বত্যঞ্চলকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি করতে চাই সবসময়। তাই তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবন্ধ হয়ে প্রতিরোধ করতে হবে।
সীতা মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি রতন দাশ এর সভাপতিত্বে বারণী স্নান অনুষ্ঠানে কাপ্তাই প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ঝুলন দত্তের সঞ্চালনায় এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইছাইন চৌধুরী, কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুল হক, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমন দে, রাঙমাটি পার্বত্য জেলা পূজা উদযাপন সমন্বয় পরিষদের আহবায়ক অমলেন্দু হাওলাদার, কাপ্তাই উপজেলা আওয়ালীগের যুগ্ম সম্পাদক ও শ্রমিকলীগ নেতা আব্দুল ওহাব, কাপ্তাই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন, চন্দ্রঘোনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আজম, কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ, চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন মিলন, চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরী, কাপ্তাই জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুবর্ণ ভট্টাচার্য প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দাশ এবং সীতা মন্দিরের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ জ্যোতির্ময়ানন্দ পুরী মহারাজ।
সভার পূর্বে প্রধান অতিথি রাঙামাটি জেলা পরিষদের অর্থায়নে ১ কোটি টাকা ব্যয়ে সীতারঘাট মন্দির কমপ্লেক্স ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এছাড়া মহাবারুণী স্নান উপলক্ষে গতকাল শনিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যা ৭ টায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং রাত ৮ টায় মহানামযজ্ঞের শুভ অধিবাস অনুষ্ঠিত হয় বলে মন্দির কতৃপক্ষ জানিয়েছেন।