পাথর উত্তোলন করায় ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে ভোলাগঞ্জ আদর্শগ্রাম। হুমকির মুখে রয়েছে পাঞ্জেগানা মসজিদ ও ঘরবাড়ি। গত পনের দিনে নদীর পাড় ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ঘরবাড়ি ও মসজিদের নিকটে চলে এসেছে। বর্ষায় পানির স্রোতে এই এলাকার ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ভোলাগঞ্জ আদর্শগ্রামের বেড়াই মিয়ার ঘাটে প্রতি রাতে ৪ থেকে ৫টি শেইব মেশিন (নৌকায় বসানো ডিজেল চালিত ইঞ্জিন) দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হয়। একেকটি মেশিনে প্রতি রাতে ২০ হাজার করে টাকা দিতে হয়। জায়গার মালিকানা দাবি করে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী এসব মেশিন থেকে টাকা নিয়ে থাকেন। গত প্রায় ১৫ দিন থেকে রাতের বেলা এই মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে ভেঙ্গে যাচ্ছে নদীর পাড়। ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে আদর্শগ্রাম পাঞ্জেগানা মসজিদ ও নদীর পাড় ঘেষা ঘরবাড়ি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধলাই নদীর পশ্চিম পাড় ঘেষে মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করায় ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু জায়গা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। রাতে মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হয় আর দিনে নৌকা দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়। বালু পাথর উত্তোলনের ফলে যেভাবে ভাঙ্গনের দেখা দিয়েছে এতে করে এই এলাকার ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বর্ষা মৌসুমের আগেই মসজিদ ও বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় আদর্শগ্রামের মুরব্বি মখতছির আলী বলেন, গ্রামের মুরব্বিরা মিলে আমরা বাঁধা দিচ্ছি কিন্তু টাকার বিনিময়ে জায়গার মালিক দাবি করে ওরা মেশিন লাগিয়ে পাথর উত্তোলন করাচ্ছে। আমাদের বাঁধা মানছে না। আমরা গ্রামের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে দরখাস্ত দিব।
এ বিষয়টি নিয়ে আদর্শগ্রামের বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন রাজু তার ফেসবুক আইডিতে লিখেন আমাদের গ্রামকে দেখার মত কেউ নাই। আমরা সবাই যদি আমাদের গ্রামকে আমরা ভালোবাসতাম তাহলে আজকে এই অবস্থা দেখতে হত না। বৃষ্টির পানি যখন আসবে তখন গ্রাম দুই ভাগ হতে সময় লাগবে না। আর বন্যা যখন আসবে তখন আমাদের এত মায়ার ঘড় বাড়ি নদিতে বিলিন হয়ে যাবে। দুই চার জনের লাভের জন্যে কেনো আমরা সারা গ্রাম ভুক্তভোগী হব। এই বিষয় কি আমাদের গ্রামের মানুষের চোখে পরেনি না। আমি উপজেলা প্রশাসন কোম্পানীগঞ্জ সিলেট এর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি দয়া করে আমাদের গ্রামকে রক্ষা করুন।
তিনি আরও লিখেন একদলে বোমা মেশিন দিয়ে খাইয়া (পাথর তুলে) এলাকার পাড়ে ধরাইছে, আরেক দল শেইব দিয়ে খাইয়া এলাকাকে দুই ভাগ করার চিন্তায় আছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আবুল হাসনাত বলেন, সোমবার সিলেটের একজন ম্যাজিস্ট্রেট ভোলাগঞ্জ আদর্শগ্রামের ঐ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আমিও সেখানে যাব। অবৈধভাবে কেউ এই এলাকা থেকে পাথর উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বলেন, আদর্শগ্রামে শেইব মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের খবর পেয়েছি। ২দিন আগে রাত ৩টায় পুলিশ পাঠিয়েছিলাম কিন্তু পুলিশ গিয়ে তাদের পায়নি। এখান থেকে যেই পাথর উত্তোলন করবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।