
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চাঞ্চল্যকর এক ঘটনা ঘটে গেছে ।
গত শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে খড়গপুর বিজেপি কার্যালয়ে যা ঘটেছে, তারপর আর শুধু স্থানীয় রাজনীতি নয়, জেলা থেকে রাজ্য স্তর পর্যন্ত আলোচনা তুঙ্গে।
খড়গপুর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মমতা দাস প্রকাশ্যে জুতাপেটা করেছেন নিজের দলের নেতা অশোক সিংহকে। মুহূর্তেই এ ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় এক ব্যক্তি ফুটপাথে চাউমিনের দোকান বসাতে চাইছিলেন। তার জন্য দশ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন মমতা দাস। সেই অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আসল ব্যাপার অশোক সিংহের। তার কথায়, ‘অশোক সমাজবিরোধী। বিজেপির কেউই তাকে মানে না।
অন্যদিকে অশোক দাবি করেছেন, ‘মমতা টাকার জন্য চাঁদাবাজি করছে। আমি প্রতিবাদ করায় এভাবে সে মারধর করেছে আমাকে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনাটি নিছক হাতাহাতি নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে দলের ভেতরের গভীর দ্বন্দ্ব, প্রভাব বিস্তারের লড়াই আর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের ঝড়।
কার্যালয়ের ভেতরে প্রকাশ্যে এই সরাসরি দ্বন্দ্বে বিব্রত বিজেপি মহল। জেলা বিজেপি জানিয়েছে, এ ধরনের আচরণ শৃঙ্খলাবদ্ধ দলে চলতে পারে না। সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনার সময় অশোক উপস্থিত সবাইকে বলেন, ‘দেখুন, নারী হওয়ার সুযোগ নিচ্ছে। আমাকে জুতা দিয়ে মারছে। এখনই পুলিশ ডাকছি।’ এসময় মমতার দৃপ্ত উত্তর, ‘আবারও মারব। নিশ্চয়ই মারব।
কিন্তু জনমনে প্রশ্ন, বিজেপি কি সত্যিই কঠোর শাস্তি দেবে, নাকি তৃণমূলের মতো ঘটনার গুরুত্ব কমিয়ে রাখবে? কারণ, কয়েক মাস আগেই খড়গপুরের তৃণমূল নেত্রী বেবি কোল রাস্তায় প্রকাশ্যে বৃদ্ধকে মেরেছিলেন, তার গায়ে কালি ছিটিয়েছিলেন। তখন তৃণমূলের সমালোচনা হয়েছিল প্রবলভাবে। এখন সেই ঘটনার প্রতিচ্ছবি যেন দেখা যাচ্ছে বিজেপির ঘরে।
তৃণমূল জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা ইতোমধ্যেই খোঁচা দিয়ে বলেছেন, ‘বিজেপি নেতারাই চাঁদাবাজ। ভাগাভাগি নিয়ে মারামারি হচ্ছে।’
বিজেপি এতদিন ধরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নারীর প্রতি সহিংসতা, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে সরব হয়েছে। এখন নিজেদের দলে একই দৃশ্য সামনে আসায় বিজেপির অবস্থান নড়বড়ে।
খড়গপুরের এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এখন দ্বিগুণ চাপে। একদিকে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা, অন্যদিকে বিরোধীদের তোপ সামলানো। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভোটের আগে এ ধরনের কাণ্ড বিজেপির ভাবমূর্তিকে দারুণভাবে আঘাত করবে। সাধারণ মানুষ রাজনীতিকে বিনোদনের চোখে দেখলেও দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দলের ওপর।
ঘটনাটি শুধু ব্যক্তিগত রেষারেষি নয়, স্থানীয় ক্ষমতা দখলের লড়াইও বটে। ছোট একটি দোকান বসানোর মতো বিষয় থেকে শুরু করে দলীয় পদ—সবকিছুতেই দ্বন্দ্ব বাড়ছে। সাধারণ মানুষ দেখছে, দুই পক্ষই পরস্পরকে ‘চোর’ বা ‘চাঁদাবাজ’ বলে অভিযুক্ত করছে। এ যেন রাজনীতির আয়নায় প্রকৃত চিত্র—যেখানে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ, ক্ষমতার লড়াই আর ব্যক্তিগত আক্রোশ সব একসঙ্গে মিশে যায়।