মা-বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। দুনিয়ার সব মানুষের বিকল্প কল্পনা করা সম্ভব হলেও মা বাবার বিকল্প নেই। মা-বাবা উভয়ই সন্তানের জন্যে শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তবে মা’র ব্যাপারটা কিছুটা ব্যতিক্রম। সন্তানের জন্যে উভয়-ইকষ্ট স্বীকার করেন। কিন্তু মায়ের কষ্ঠ কিছু ব্যতিক্রম। কতো রাত মাকে অনিদ্রায় কাটাতে হয়েছে। সন্তানের আরাম-আয়েশের জন্যে। এক্ষেত্রে বাবার কষ্ট টুকু কম। সন্তান গর্ভকালীন দীর্ঘ সময় যে কষ্ট দূর্ভোগ ভোগ করতে হয়েছে, তা মাকেই স্বীকার করতে হয়েছে। তখনকার সময় মা’কেই একা দু’জনের খাবার খেতে হয়েছে। নিজের জন্য আবার সন্তানের জন্যে। মায়ের ক্যালসিয়াম-ভিটামনি ক্ষয় রূপ সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য মন-মানসিকতার অবনতি হয়েছে সন্তানের জন্য।
নাড়ীর মাধ্যমে আল্লাহ পাক তাঁর কুদরতি সাহায্যে সন্তানকে খাবারের যোগান দিয়েছেন। সন্তানের রক্ত-মাংস, হাড়, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সবই আল্লাহ পাক মায়ের খাবার ও শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে দান করেছেন। সন্তান নেয়ার যন্ত্রনা, প্রসববেদনা ও প্রসব যন্ত্রনা মা’কেই ভোগ করতে হয়েছে। এমনকি মা’য়ের পেট কেটে অঙ্গহানী করে সন্তানের মুখ দেখার অভিলাস ও বাসনা ত্যাগ-যাতনা একমাত্র মা-ই বরদাশত করতে সক্ষম। পৃথিবীতে যার দৃষ্টান্ত নজির বিহীন। এতো কিছুর পরও রক্তাক্ত মা সন্তানের মুখ দেখে যেনো বিশ^ শান্তি ও আনন্দ খোঁজে পায়।
পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর শব্দটি হচ্ছে মা। কবির ভাষায়, ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেনো ভাই; ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই।’ যার এক টুকরো সান্ত্বনার বাণী আর হাত বুলানো জগৎসংসারের সকল দুঃখকষ্ট মুহূর্তেই ভুলিয়ে দেয় তিনিই হলেন মা। শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম মাকে দিয়েছে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মান। ইসলামের দৃষ্টিতে বাবার চেয়ে মায়ের মর্যাদা তিন গুণ বেশি। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হয়ে জানতে চান, ‘হে আল্লাহর রাসুল! মানুষের মধ্যে আমার কাছে সর্বোত্তম সেবা লাভের অধিকার কার? নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমার মায়ের।’ লোকটি পুনরায় জানতে চান, ‘তারপর কার?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মায়ের।’ লোকটি পুনরায় জানতে চান, ‘তারপর কার?’ তিনি বললেন, ‘ ‘তোমার মায়ের।’ লোকটি আবারও জানতে চান, ‘তারপর কার?’ তিনি বললেন, ‘তোমার পিতার।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
নারী জীবনের একমাত্র পূর্ণতা ও সফলতাই রয়েছে নারীর মাতৃত্বে। মানব বংশ বিস্তার নারীর মাতৃত্বেরই সুফল। যে নারী মা হতে বঞ্চিত সে যেন পৃথিবীর সবকিছু থেকেই বঞ্চিত। এজন্যই হযরত আয়শা রাদিআল্লাহু আনহা নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমস্ত স্ত্রীদের মধ্যে সর্বাধিক প্রিয় কুমারী হওয়া সত্বেও নিঃসন্তান হওয়ায় আম্মাজান হজরত খাদীজা রাদিআল্লাহু আনহার সমতুল্য হতে পারেননি।
কেননা, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক মাতৃত্ব তথা মা হওয়ার সৌভাগ্য একমাত্র খাদীজা রাদিআল্লাহু আনহারই নসীব হয়েছিলো। জান্নাতে মহিলাদের সর্দার হযরত ফাতেমা রাদিআল্লাহু আনহা, হযরত খাদীজা রাদিআল্লাহু আনহারই মেয়ের নাম। এবং জান্নাতের যুবকদের দুই সর্দার হজরত হাসান ও হুসাইন রাদিআল্লাহু আলহুমা হযরত ফাতিমা রাদিআল্লাহু আনহার দুই তনয়ের নাম। নারীর মাতৃত্বের বিকাশ না ঘটলে এমন আরো হাজারো লাখো কোটি মহা মনিষীদের পৃথিবীতে আগমন ঘটতো না। একমাত্র মাতৃত্ব দ্বারাই একজন নারীর নারীত্ব ও স্ত্রীত্বে পূর্ণতা আসে। নারীর এই মাতৃত্ব রক্ষার প্রকৃতব্যবস্থাপনা হলো নারীর উদর, যা সর্বজন স্বীকৃত মানুষ তৈরির ‘পবিত্র এক খোদায়ী কারখানা’ সে কারখানার পূর্ণ সংরক্ষণ করতে হবে।
পৃথিবীর মেইলফ্যাক্টোরির দামী আসবাবপত্রের সংরক্ষণ যেমনি দেয়ালঘেরা বেষ্টনীর মাধ্যমে করা হয়, তেমনিভাবে সৃষ্টির সেরা মানুষ উৎপাদনের মহামূল্যবান ফ্যাক্টরির আসবাব তথা নারীর মাতৃত্বের সর্বোচ্চ সংরক্ষণ আবশ্যক। আর সেটা হলো একমাত্র ‘ইসলামের পবিত্র বিধান পর্দা।’ পর্দার মাধ্যমেই একজন নারীর মাতৃত্ব যাবতীয় আকর্ষিত ক্ষতিকারক সকল বিষয়াবলী থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত হতে পারে। পর্দার বিধান পালনে অভ্যস্ত নারীর নিজেদের লাজুকতা ও শালীনতা রক্ষার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিপদের ঝুঁকিও কমায়। মা, তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কোনো অনুগত সন্তান নিজের মা-বাবার দিকে অনুগ্রহের নজরে দেখে। মহান আল্লাহ তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজে¦র সাওয়াব দান করেন। (বায়হাকি, মিশকাত, পৃষ্ঠা-৪২১) মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে বোঝার তাওফিক দান করুন।
মো. লোকমান হেকিম লেখক : চিকিৎসক-কলামিস্ট।