স্টাফ রির্পোটার: ডাকাত শহীদ। কেউ চেনেন চোর নামে। কেউবা ছিনতাইকারী। সিলেটের অপরাধ জগতে বিচরণ করা এই শহীদ এখন ছিনতাই ও ডাকাত নেটওয়ার্কের গডফাদার। নিজে এক সময় ছিনতাই করতো। এখন নিজে অপারেশনে নামে না। অপারেশন করে তার সহযোগীরা। নিয়ন্ত্রণ করে শহীদ নিজে। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজন চিহ্নিত ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানতে পারে শহীদের নাম। দীর্ঘদিন ধরে তার নামটি আড়ালে ছিল।
নতুন করে অপরাধের গডফাদারের নাম আসায় পুলিশ শহীদকে খুঁজছিল। কিন্তু তার হদিস পাচ্ছিল না। কোতোয়ালি থানা পুলিশ নগরীর বন্দরবাজার রংমহল টাওয়ারের কাছ থেকে ডাকাতদের আটক করে পুলিশ।
এরপর থানায় জিজ্ঞাসাবাদে তারা গডফাদার হিসেবে জানায় শহীদের নাম। পরে সাবেক ওসি আলী মাহমুদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম অভিযান শুরু করে। অভিযানের সময় সিলেট শহরতলীর জৈনপুর এলাকার একটি বাসা থেকে শহীদকে আটক করা হয়। গ্রেপ্তারের পর থেকে পুলিশ শহীদকে তার অপরাধ নেটওয়ার্ক এবং সহযোগীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে। শহীদ তার ৩ সহযোগীর নাম প্রকাশ করে। পুলিশ তাদেরকেও গ্রেপ্তার করেছে। কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি আলী মোহাম্মদ মাহমুদ জানিয়েছেন, এক সময় নিজেই ছিনতাই করতো আব্দুস শহীদ। কয়েক বছর ধরে সে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করে। তার নেটওয়ার্কের কে কোথায় যাবে, কী করবে এসব বিষয়ে তদারকি করে সে। পাশাপাশি কোনো সদস্য গ্রেপ্তার হলে তাকে ছাড়িয়ে আনার কাজও করতো। ফলে তার সিন্ডিকেটের সদস্যদের বেশিদিন জেলে থাকতে হতো না।
সাবেক ওসি জানিয়ে ছিলেন, ভয়ঙ্কর অপরাধী শহীদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে সিলেটের কোতোয়ালিসহ বিভিন্ন থানায় ৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে এসব মামলা দায়ের করা হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে শহীদ দক্ষিণ সুরমার শহরতলীতে অবস্থান করে পুরো নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করতো। আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, মৌলভীবাজার সনকাঁপন গ্রামের বাসিন্দা মৃত নীল মিয়ার ছেলে শহীদ। প্রায় ১৫ বছর ধরে সে সিলেট নগরে বসবাস করছে। দক্ষিণ সুরমা, টুকেরবাজারসহ কয়েকটি এলাকায় সে বসবাস করেছে। প্রথমে বন্দরবাজার এলাকার ছিঁচকে অপরাধী ছিল শহীদ। মোবাইলসহ পথচারীদের পকেট মারের ধান্ধায় ব্যস্ত থাকতো। এসব অপরাধ করতে গিয়ে এরই মধ্যে কয়েকবার ধরাও পড়ে। এক সময় বন্দরবাজার এলাকা নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। বিভিন্ন রুটে সিএনজি অটোরিকশায় ছিনতাই করতে তার নেতৃত্বে একটি টিম গড়ে ওঠে। ওই টিমের সদস্যরা দিনের বেলা চুরি, ছিনতাই ও রাতে ডাকাতি করতো। ওই সময় মামলাও হয় তার বিরুদ্ধে। পুলিশ জানিয়েছে, নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পর শহীদ দক্ষিণ সুরমায় চলে যায়। ওখানে সে তার বাহিনীতে আরও সদস্য বাড়ায়। এখন তার নেতৃত্বে ১৫-১৬ জনের ছিনতাইকারী দল সিলেট নগরে নানা অপকর্ম করে বেড়ায়। এসব অপরাধ করতে গিয়ে গত একমাসে কোতোয়ালি পুলিশ ৭-৮ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে।