
রাইজিংসিলেট- সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীতে আবারও শুরু হয়েছে অবৈধ বালু উত্তোলন। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র নদীর পাড় কেটে, পরিবেশ ও স্থাপনা উপেক্ষা করে, দিনদুপুরে বালু তুলছে। এই অবৈধ কার্যক্রমের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে শাহ আরেফিনের মাজার, অদ্বৈত মহাপ্রভুর আশ্রম, বিখ্যাত শিমুল বাগানসহ নদীর দুই তীরের অন্তত ২০টি গ্রাম এবং যাদুকাটা নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা পর্যটন সম্ভাবনা।
যাদুকাটা নদী একসময় ছিল পাহাড়, স্বচ্ছ জল আর শিমুল বাগানে ঘেরা একটি স্বপ্নময় পর্যটন গন্তব্য। বর্তমানে সেখানে প্রতিদিন হাজারো শ্রমিক দিয়ে নদীর পাড় কেটে বালু তোলা হচ্ছে, যা নদীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে।
উল্লেখযোগ্য যে, সম্প্রতি উচ্চ আদালতের অনুমতিতে ‘জিনানা এন্টারপ্রাইজ’ ও ‘তাহিয়া স্টোন ক্রাশার’ নামের দুটি প্রতিষ্ঠানকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু ইজারার সীমানা না মানা, স্থানীয়দের সঙ্গে বিরোধ এবং প্রশাসনের পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবে এই অনুমোদনই এখন অবৈধ উত্তোলনের ঢাল হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নদী তীরবর্তী কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও চক্র—যেমন লাউড়েরগড়ের কিছু বাসিন্দা—অবৈধভাবে বালু তুলছেন ও তা বাজারজাত করছেন। মুখ খুললে হুমকি ও মামলা ঠেকাতে হয় বলে অনেকেই প্রতিবাদ করতে পারছেন না। এমনকি নদীভাঙনে বাড়িঘর হুমকিতে পড়লেও কেউ সাহস করে কথা বলতে পারছেন না।
হাওর ও নদী রক্ষা আন্দোলনের নেতারা বলছেন, ইজারাদারদের ছত্রছায়ায় এই সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে বালু ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এই অবস্থায় নদী ও তার জীববৈচিত্র্য, আশেপাশের জনপদ, এবং ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর অস্তিত্বই এখন বিপন্ন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লোকবল সীমিত হলেও অভিযান চালানো হচ্ছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও পর্যটন সম্ভাবনার দিক থেকে যাদুকাটা একটি অনন্য স্থান। এখনই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে, আমরা হারাতে বসেছি একটি অমূল্য প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।