যৌতুকের দাবি পূরণ করতে না পারায় ভেঙ্গে গেছে হাজারো বিয়ে ও ঘর-সংসার। সম্প্রতি আইনের কঠোরতার কারণে যৌতুক দেওয়া বা নেওয়া অনেকটাই কমেছে। তবে বর্তমানে বিয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায় যৌতুক শব্দটি ব্যবহার না করে নির্দিষ্ট কোনো পণ্য দেওয়া বা নেওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়।
সবচেয়ে উল্লেখ যোগ্য হলো বাইক বা মোটরসাইকেল। বিয়ের পর জামাইকে বাইক কিনে দেওয়া এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তবে কিছু শ্বশুর রয়েছে তারা ইচ্ছা করেই দিয়ে থাকে। আবার কিছু রয়েছে, যারা বউকে চাপ দিয়ে পরিবারের কাছে থেকে বাইক উপর দিতে বাধ্য করে। না দিলে সংসারে অশান্তি শুরু হয়।
তবে শ্বশুর বাড়ি থেকে উপহার নেওয়া নিয়ে ইসলাম কি বলছে তা অনেকেই জানে না। ইসলামে বিয়েতে জোর করে কোনো কিছু নেওয়াকে হারাম বলা হয়েছে। পরস্পরে হাদিয়া আদান-প্রদান মুস্তাহাব।
হযরত আলী (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ফাতেমাকে একটা মোটা কাপড়ের চাদর, একটা মশক ও একটা ইযখিরের আঁশভরা চামড়ার বালিশ উপহার হিসাবে দিয়েছিলেন (আহমাদ হা/৬৪৩; নাসাঈ হা/৩৩৮৪)।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, দু’টি যাঁতা, একটি চামড়ার পানপাত্র এবং দু’টি কলস (আহমাদ হা/৮১৯; ৮৩৮)। সেই সঙ্গে একটি দড়ির খাটও উপহার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৬৯৪৪; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৫২১০)।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা পরস্পরে হাদিয়া দাও এবং মহববত বৃদ্ধি কর’ (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫৯৪; মিশকাত হা/৪৬৯৩)।
উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই জামাইয়ের আত্মসম্মানের দিকটিও খেয়াল রাখতে হবে, যাতে কোন বিষয় তার সম্মানে আঘাতের কারণ না হয়। অপরদিকে বিবাহের পূর্বে বা পরে জামাইয়ের পক্ষ থেকে সরাসরি বা মেয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করে শ্বশুর পক্ষের নিকট কোন কিছু দাবী করা বা শর্ত করে নেওয়া নিঃসন্দেহে যৌতুক, যা হারাম।
আসুন জেনে নিই উপহার হালাল হওয়ার শর্তগুলো,,
উপহার হারাম হওয়ার শর্তগুলো
১. যদি উপহার আদান-প্রদানে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়, যেমন: বিয়েতে বাইক না দিলে বিয়ে হবে না।
২. যদি তা যৌতুক হিসেবে চাওয়া হয় বা সমাজে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে,।
৩. যদি এতে অন্যকে কষ্ট দেওয়া হয় বা অপমান করা হয়।
৪. যদি তা বাধ্যতামূলক করা হয়, উপহার হিসেবে নয় বরং দাবির মতো হয়।
১. উপহার যদি নিছক ভালোবাসা ও সম্মান প্রকাশের মাধ্যম হয়।
২.এর পেছনে কোনো শর্ত বা চাপ না থাকে, যেমন: এই জিনিস না দিলে মেয়ে দিবো না বা বিয়েতে এইসব দিতে হবে।
৩. কোনো প্রকার অপমান, কৃপণতা বা জোর-জবরদস্তি নেই,
এমন উপহার হালাল এবং গ্রহণ করা জায়েয।
তাহলে এটি যৌতুক হিসেবে গণ্য হবে এবং হারাম।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ গ্রাস করো না এবং জেনে শুনে লোকদের ধন-সম্পদের কিয়দংশ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণকে উৎকোচ দিও না। (সূরা আল-বাকারা ২:১৮৮)