
রাইজিংসিলেট- মৌলভীবাজারের রাতে ছিল সব ঠিকঠাক, সকালে মিলল দুই লাশ—কি ঘটেছিল ফুলতলায়?
মৌলভীবাজারে চা শ্রমিক দম্পতির রহস্যজনক মৃত্যু: ঘরে স্ত্রীর নিথর দেহ, বাইরে স্বামীর লাশ। মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের এলবিনটিলা ফাঁড়ির একটি চা বাগানে চাঞ্চল্যকর এক ঘটনা ঘটে গেছে। শনিবার, ৫ জুলাই সকালবেলা, স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশ একটি চা শ্রমিক দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল ছিল তাদের নিজ বসতবাড়ি ও বাড়ির সামনের রাস্তা।
নিহতরা হলেন দিলীপ বুনারজি (৪৭) ও তার স্ত্রী সারি বুনারজি (৩৮)। তাদের পরিবারটি ওই বাগানের শ্রমিক কোয়ার্টারে বসবাস করতেন।
স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, ওই দম্পতির আট বছর বয়সী ছোট ছেলে লিটন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে তার মা ঘরের মেঝেতে নিথর হয়ে পড়ে আছেন। বারবার ডাকলেও কোনো সাড়া না পেয়ে সে বাইরে গিয়ে দেখে, তার বাবা রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছেন। এরপর সে চিৎকার করলে আশপাশের প্রতিবেশীরা ছুটে এসে ঘটনাস্থলে হাজির হন এবং নিশ্চিত হন, উভয়েই আর বেঁচে নেই। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।
দম্পতির তিনটি সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে ঢাকায় কর্মরত, মেয়ে দাদাবাড়িতে থাকে, আর ছোট ছেলে লিটন মা-বাবার সঙ্গেই থাকত। লিটনের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক দৃশ্য এখন এলাকায় গভীর বেদনার সঞ্চার করেছে।
ঘটনার পরপরই পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে এবং প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে। জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মুরশেদুল আলম ভূঁইয়া সংবাদমাধ্যমকে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে, ওই দম্পতি বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন। ঘরের বাইরে রাস্তার ধারে একটি বিষের খালি বোতল পাওয়া গেছে এবং উভয় মরদেহের মুখে দুর্গন্ধও ছিল, যা বিষক্রিয়ার ইঙ্গিত দেয়। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হতে মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে, এটি আত্মহত্যা না কি অন্য কোনো কারণ রয়েছে।
এদিকে স্থানীয় চা শ্রমিক নেতা হরগোবিন্দ গোস্বামী জানান, নিহত দম্পতি তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে খুব সাধারণ ছিলেন। শুক্রবার রাতেও তারা পরিবারের সবাই মিলে স্বাভাবিকভাবে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। দাম্পত্য জীবনে তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ ছিল না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তবে এমন একটি শান্ত পরিবারের এই আকস্মিক মৃত্যু এলাকাবাসীর মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আত্মহত্যা হলে তার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে, সেটিও খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন অনেকেই।
ওসি মুরশেদুল আলম আরও জানান, নিহতদের বড় ছেলে ঢাকা থেকে এসে পৌঁছালে তার সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে পারিবারিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আরও কিছু জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে প্রকৃত কারণ স্পষ্ট হবে। এ ঘটনায় পুলিশ এখনও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।