রোজা রাখার জন্য সেহরিতে কী খাবেন সেটিও জানেন না কেউ।
পবিত্র রমজান মাসে সারাদিন রোজা রাখার পর শুধু পানি খেয়েই ইফতার সারতে হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের অনেককে। এমনকি আগামীকালের রোজা রাখার জন্য সেহরিতে কী খাবেন সেটিও জানেন না কেউ।
কড়াইল বস্তিতে লাগা আগুনে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছেন প্রায় আড়াইশ পরিবার। কিন্তু রাত পর্যন্ত তাদের জন্য আসেনি কোনো সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা।
রোববার (২৪ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কড়াইল বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, পোড়া স্তূপের ওপর খোলা আকাশের নিচে রাত কাটছে আগুনে সর্বস্ব হারানো এসব নিম্ন আয়ের মানুষদের। সহায়-সম্বল হারানো অনেকে এখনো আহাজারি করছেন।
প্রায় সবার চোখেই বিষণ্নতার ছাপ। অনেকে মাথায় হাত দিয়ে নির্বাক বসে আছেন।
রেহানা বলেন, অন্যের বাসায় কাজ শেষ করে নিজের বাসায় আসছি। ইফতারের জন্য সবকিছু কাটাকাটি করে গোসল করতে যাই। তখনই আগুন লাগে। ভেজা কাপড়ে বস্তি থেকে বের হয়ে আসছি। আর কিছু নিয়ে বের হতে পারিনি। শুধু জীবনটাই নিয়ে বের হইছি। সারাদিন রোজা রাখার পর এখন পর্যন্ত মুখে কিছু তুলতে পারিনি। শুধু পানি খেয়েছি। কেউ কোনো সাহায্য নিয়ে আসেনি।
সেহরির কথা জিজ্ঞেস করতেই বলেন, কী দিয়ে সেহরি করবো জানি না। নিজের সহায়-সম্বল বলতে তো আর কিছু রইলো না। আল্লাহ যদি সেহরি করায় তো করবো। না করালে খালি পেটেই রোজা রাখবো।
ক্ষতিগ্রস্তদের প্রায় সবাই নিজের পোড়া ঘরের ভিটের ওপর বসে অপেক্ষা করছেন সাহায্য-সহযোগিতার। অপরিচিত কাউকে দেখলেই দৌড়ে আসছেন ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় নিজের নাম দিতে। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে এখনো সরকার বা অন্য কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো ত্রাণ বা সহযোগিতা আসেনি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা করতে দেখা গেছে।
নিজের পোড়া ঘরের ছাইয়ের পাশে বসেছিলেন বাসাবাড়িতে বুয়ার কাজ করা ৪০ বছরের নারী জুলেখা। তিনি বলেন, আমার তিনটি রুম ছিল। আমার স্বামী নেই। দুই ছেলে ও তাদের বউদের নিয়ে এখানে থাকতাম। যখন আগুন লাগে তখন আমি কাজে ছিলাম। ছেলের বউয়ের ফোনকল পেয়ে বস্তিতে ছুটে আসছি। কিন্তু কিছুই বের করতে পারিনি। এ রোজার দিনে একটু ইফতার করার সামর্থ্যও এখন আমার নেই। কিছুক্ষণ আগে একজন একটা কেক দিয়ে গেছে। সেটা খেয়েছি। সেহরি কী দিয়ে করবো জানি না।
জুলেখার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা বলা দেখে অনেকে সহযোগিতা পাওয়ার আসায় সেখানে ছুটে আসেন। তাদের একজন রেহানা। তিনিও বাসা-বাড়িতে বুয়ার কাজ করেন। স্বামী, মেয়ে, মেয়ের জামাই ও এক ভাইপোকে নিয়ে থাকতেন এ কড়াইল বস্তিতে।
আলা-উদ্দিন নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, সরকারি-বেসরকারি কোনো সাহায্যই পাইনি। সন্ধ্যায় পাশের একটি মসজিদে মুড়ি-বুট দিয়ে ইফতার করছি। কেউ কোনো সাহায্য নিয়ে আসেনি। আমাদের দিকে কেউ দেখে না। রাতে সেহরি করবো কেমনে জানি না।
রোববার (২৪ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে ভয়াবহ আগুন লাগে কড়াইল বস্তির একটি অংশে৷ আগুনে পুড়ে যায় কয়েকশ টিন-কাঠের ঘর। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১২টি ইউনিটের প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় বিকেল ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর থেকেই খোলা আকাশের নিচে জীবন কাটছে ক্ষতিগ্রস্তদের।