রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের সমাবেশে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে গণহত্যার অভিযোগে পতন হওয়া সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা তদন্তের জন্য মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার (১৮ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকী-আল ফারাবী এ আদেশ দেন।
এর আগে একই আদালতে এ মামলার আবেদন করেন বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগের বিষয়ে মতিঝিল থানা পুলিশকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রছায়ায় ব্লগারদের ধর্মীয় অবমাননা ও হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি এবং বাজে মন্তব্য ও লেখালেখির প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা দাবি সরকারের কাছে জানায়। সরকার দাবি না মানার কারণে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় অবস্থান নেয়। ৫ মে রাত ১১টা থেকে ৬ মে ভোর রাত ৪টা পর্যন্ত রাস্তা ও বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে শেখ হাসিনার মদদে অন্যান্য আসামিরা যোগসাজশে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা মিলে নিরীহ মাদরাসার ছাত্র ও পথচারী লোকদের ওপর গণহত্যা চালায়। হত্যা করে সরকারি সিটি করপোরেশনের গাড়ি এনে লাশগুলো অজ্ঞাত স্থানে গুম করে ফেলে।
ওই অভিযানে নিরীহ প্রায় ৩০০০-৩৫০০ জন মানুষকে নির্বিচার গণহত্যার অভিযোগ করেন তিনি।
মামলার অপর আসামিরা হলেন পতিত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবুল কালাম আজাদ, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, এনএসআইয়ের তৎকালীন প্রধান জিয়াউল হাসান, তৎকালীন আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ, সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার, মতিঝিল বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ নাজমুল আলম, মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান, ওসি ওমর ফারুক, ফরমান আলী বিশ্বাস, হামদাদ গ্রুপের অবসরপ্রাপ্ত ডিরেক্টর মেজর (অব.) ইকবাল, তৎকালীন ওয়ার্ড কমিশনার মনসুর আহমেদ, ইমরান, মতিঝিল থানার ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল হক হিরণ, মোহাম্মদ সাঈদ (কমিশনার), আওয়ামী লীগ নেতা আকরাম হোসেন, সাবেক কাউন্সিলর ফারজানা আক্তার ডলি, মমতাজ পারভীন, আনিসুর রহমান সরকার, আলমগীর হোসেন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান শেখ সালাউদ্দিন সালু, মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, মোহাম্মদ এমদাদুল হক ও শেখ শাহে আলম তালুকদার।
অবশ্য মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের ভাষ্যমতে, ৬১ জন লোক সেদিন মারা যায়। যদিও সেই প্রতিবেদনের কারণে অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয় সাইবার ট্রাইব্যুনাল। আদিলুর রহমান খান বর্তমান সরকারের একজন উপদেষ্টা।