শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসেন সিলেট আগ্রগামীর শিক্ষার্থীরা।
গতকাল মঙ্গলবার ( ২০ আগষ্ট ) “ রাইজিং সিলেট ” পত্রিকায় “ সিলেট অগ্রগামী গালর্স স্কুলের শিক্ষক আবু ইউসুফ মো: সহিদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানী অভিযোগ’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসেন শিক্ষার্থীরা।
সিলেট মহানগরের জিন্দাবাজার এলাকার অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সাবেক এবং বর্তমান ছাত্রীরা অশ্লীল আচরণকারী এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন। বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে তারা বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেন এবং প্রধান শিক্ষিকা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন। পরে বেলা ২টার দিকে মিছিল নিয়ে তারা তালতলাস্থ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর কাছেও লিখিত অভিযোগটি দেন।
দীর্ঘ দিন থেকে নানা ভাবে হয়রানীর স্বীকার ছাত্রীরা মুখ খোলতে শুরু করেছেন বিকৃত এই শিক্ষক নামধারী আবু ইউসুফ মো: সহিদের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে ছাত্রীদের যৌন হয়রানী করে আসছেন বলে ভুক্তভোগীরা স্যোসাল মিডিয়াসহ এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন। দীর্ঘদিন থেকে প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রীদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানী করে আসলেও বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে সম্প্রতি। ভোক্তভোগীরা জানিয়েছেন এই শিক্ষকের হাত থেকে রেহাই পায়না ক্লাশ ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্রীরাও।
শিক্ষক আবু ইউসুফ মো: শহিদের বিরুদ্ধে প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রীদেরকে নানা রকম ভাবে যৌন হয়রানী করে আসছিলেন। তিনি ঐ স্কুলের ইংরেজী বিভাগের সহকারী শিক্ষক। তার বাড়ী মৌলভীবাজার জেলায়। গত কয়েকদিন থেকে অগ্রগামীয়ান নামের একটি ফেইসবুক আইডিতে হয়রানীর স্বীকার ছাত্রীরা তাদের সাথে হওয়া নানা রকম অভিযোগ তুলে ঐ শিক্ষকের অপসারণসহ দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী তুলেছিলেন। প্রাইভেট পড়ানোর নামে নিজের বাসায় ছাত্রীদের বাধ্য করতেন তার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক করার জন্য। নতুবা তিনি ঐ ছাত্রীকে পরিক্ষায় উত্তর পত্রে মার্ক কমিয়ে দিতেন বলেও অভিযোগ করেন অনেকে। ছাত্রীরদের হয়রানীর বিষয়ে গত ১৯ আগষ্ট এ রকম একটি স্পষ্ট বিবৃতি এসেছে আমাদের কাছে। যেখানে শিক্ষক আবু ইউসুফের বিরদ্ধে নানা রকম যৌন হয়রানীর অভিযোগ উল্লেখ করে তার অপসারণ সহ কঠিন শাস্তি দাবী করা হয়। সেখানে বর্তমান ও প্রাক্তন অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন এই শিক্ষক নামধারী অমানুষ কর্তৃক সাবেক অনেক ছাত্রী যৌন হয়রানীর স্বীকার হয়েছেন। কিন্তু তার ক্ষমতার প্রভাবের কারণে কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করলেও তার বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। আবু ইউসুফ মো: সহিদ ছাত্রীদের বিভিন্ন ব্যাচে প্রাইভেট পড়ানোর কথা বলে অনেক মেয়ের সর্বনাশ করছেন। অনেক মেয়েকে করেছে যৌন হয়রানী। এমন অভিযোগ গুলো প্রকাশ্যে আসলে তার স্ত্রী বিভিন্ন ভাবে অভিযোগ কারীদের হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। অথচ এই শিক্ষককে হার স্ত্রী জনৈক ছাত্রীর সাথে নিজের বাসায় অনৈতিক কাজে হাতে নাতে ধরে তাকে ছেড়ে পিতার বাড়ি চলে গিয়ে ছিলেন। আর এখন সাফাই গাচ্ছেন স্বামীর অপকর্মের বিরুদ্ধে।
এ রকম কয়েকটি অভিযোগ থেকে জানা যায়, এই শিক্ষকের কুকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলায় রাত ২টায় আবু ইউসুফের স্ত্রী আনবার আজাদ নামের একজনকে নানা রকম হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। খাদিজা আক্তার শিল্পী নামের একজন ভোক্তভোগী অভিযোগ করে, আবু ইউসুফ মো: শহিদের নানা অপকর্ম তুলে ধরেন। আবু ইউসুফ নামের ঐ প্রাইভেট শিক্ষক নানা রকম অযুহাতে বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে থাকেন। সম্প্রতি ফোন চার্জের নাম করে নিজের বেডরুমে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানী করেন ঐ শিক্ষক। বিষয়টি ঐ ছাত্রী ফাঁস করে দিলে শিক্ষকের স্ত্রী রাফিয়া রহমান ঐ মেয়ে শিক্ষার্থীকে নানা ভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন, বিষয়টি প্রকাশ না করার জন্য। সাদিয়া সাবরিন তারান্নুমের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, ঐ শিক্ষকের হাত থেকে ক্লাশ ৩/৪ এর ছাত্রীরা রেহাই পায়নি।
রিফাত সুলতানা নামের আরেক ভোক্তভোগী বলেন, অনেক অভিযোগ তার বিরুদ্ধে থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফারিয়া খান নামের প্রাক্তন এক ছাত্রী বলেন, এখনই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ দরকার।
ফিরাত ইউলিয়াম নামে আরেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, আবু ইউসুফ সহিদ ডে সিফটে ক্লাশ নাইন/টেনের ভুগোল ক্লাস করাতেন। সেই সময় তিনি সহ ক্লাসের বিভিন্ন মেয়েকে হয়রানী করেন ঐ শিক্ষক। সে সময় আর্টসের মেয়ে শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগগ করায় পরিক্ষার উত্তর পত্রের খাতায় সবাইকে মার্ক কমিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
শিক্ষক আবু ইউসুফের ক্ষমতার উৎস: শিক্ষক আবু ইউসুফ মো: সহিদের বিরুদ্ধে এর আগে এ রকম অভিযোগ ছিলো। মৌলভীবাজার থাকা কালে এরকম অভিযোগ উঠলে তাকে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়। সেখানে ক্ষমতার মুলে ছিলো তার দুই ভাই। তার এক ভাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা আর আরেক ভাই ছিলেন বিচারক, তাই তাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি সেখানে। সিলেট আসার পর তিনি বিয়ে করেন জকিগঞ্জ এলাকার বাসিন্ধা সীমান্তিকের চেয়ারম্যান ও বর্তমান হত্যা মামলার পালাতক আসামী প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ড. আহমদ আল কবিরের ভাগ্নিকে। সেই সুবাদে তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এ.কে মোমেন পরিবারের গনিষ্ট্য আত্ম্রীয় হয়ে যান। যার ফলে প্রায়ই তার সহকর্মী শিক্ষকদের নানা রকম হুমকি ধামকি দেতেন। আওয়ামী সরকার দলীয় প্রভাব বিস্তার করেয়ে নিজের উপর আনা অভিযোগগুলো ধামাচাপা দিয়ে দিতেন সব সময়। নাম প্রকাশ না কওে একজন প্রাক্তন ছাত্রী জানান, সহিদ স্যারের কু-কর্মের কারণে জিন্দাবাজারস্থ একটি বাসা থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়। তার চরিত্র নিয়ে নিজ স্ত্রীর অনেক সন্দেহ ছিলো তাই বাসায় কোন যুবতি কাজের মহিলা রাখতেন না তিনি। সরকারের পট পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে তিনি নিজেকে জামায়াত সাজার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। আন্দোলনকারী ছাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ঐ শিক্ষক আবু ইউসুফ মো. শাহিদ দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করে আসছেন। তিনি অনেক সময় একা পেয়ে ছাত্রীদের স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করেন এবং বাজে ইঙ্গিত দেন। এমনকি ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির ছোট ছাত্রী এবং শিক্ষিকারাও তার কুদৃষ্টি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এমন কর্মকাণ্ড চালালেও ভয়ে কেউ মুখ খুলেনি। পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় এবার তারা সাহস করে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। আবু ইউসুফের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান ছাত্রীরা। অভিযুক্ত শিক্ষক আবু ইউসুফ মো.সহিদ একটি গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে বলেন, ‘আমি পারিবারিক একটি কাজে ঢাকায় আছি। অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কারণ, সদ্য হওয়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আমি তাদের পক্ষে ছিলাম এবং ফেসবুকে বেশ লেখালেখি করেছি। এই কারণে আওয়ামী লীগের সমর্থনকারী কয়েকজন এই ষড়যন্ত্র করে ছাত্রীদের উস্কে দিয়েছেন।’ অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষিকা হেপি বেগম বলেন, ‘ছাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষককে প্রাতিষ্ঠানিক সকল কাজ থেকে বিরত রেখেছি। এছাড়া তার বিষয়ে তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তার দোষ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।