রাইজিংসিলেট- তাপদাহে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু এবং শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার। বৃহস্পতিবার (২ মে) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিলেবাস কমিয়ে মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়। যদি একান্তই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হয় তাহলে মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত তাপদাহের সময়ে ক্লাসের সময় সকাল শিফট ভোর ৬টা থেকে সকাল ৮টা এবং ডে শিফট সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চালু রাখার কথা বলা হয়। পাশাপাশি প্রচলিত পেপার পেন্সিল পরীক্ষার পরিবর্তে শুধু অ্যাসাইনমেন্ট, প্রকল্পভিত্তিক কাজ, অনুসন্ধানমূলক কাজ এর মাধ্যমে মূল্যায়নের বিষয়ে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লিখিত নির্দেশনা জারির ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলে হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ১৯৪৮ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি তাপপ্রবাহ হয়েছে এবারের এপ্রিল মাসে। ফলে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি থেকে ২৪ এপ্রিল প্রকাশ করা ‘তাপপ্রবাহ: বাংলাদেশ, আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন অনুসারে উত্তর ও দক্ষিণ ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৯০ শতাংশ এলাকা তীব্র তাপপ্রবাহের বিপদে রয়েছে। আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমাদের গাণিতিক মডেল বিশ্লেষণ বলছে, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশের কিছু অংশে প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত হলেও মে মাসে দেশে সর্বকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হতে পারে। তিনি আরও বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট অঞ্চল, বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের কিছু অংশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব চট্টগ্রাম অঞ্চলে কিছু স্বস্তির বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এতে সারা দেশে চলমান দাবদাহ হ্রাসের সম্ভাবনা কম।
প্রথমবারের মতো আবহাওয়াবিদরা জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এবং অ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে একমত হয়েছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়া অস্বাভাবিক আচরণ করছে এবং এর ফলে ধীরে ধীরে তাপদাহের অঞ্চল প্রসারিত হচ্ছে। তারা বলছেন, দাবদাহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ অংশ এবং আংশিকভাবে পূর্ব এশিয়ার দেশ ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামকে প্রভাবিত করেছে।
নিউইয়র্ক টাইমস এর তথ্য অনুসারে, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েক মিলিয়ন মানুষ প্রবল তাপদাহে ভুগছে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে, কৃষি কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে এবং হিট স্ট্রোক ও সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য জটিলতার ঝুঁকি বেড়েছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পরিস্থিতিও বিশেষভাবে স্বীকার করা হয়েছে যে কিছু এলাকায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত আর্দ্রতা তাপমাত্রাকে আরও অসহ্য করে তুলেছে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড় তাপমাত্রা ১-৭ ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়েছে। তাপমাত্রার পাশাপাশি জলীয় বাষ্পের আধিক্য রয়েছে। একদিকে তীব্র গরম, অপরদিকে বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য। এ কারণে মানুষের শরীরে প্রচুর ঘাম হচ্ছে। আর্দ্রতা বেশি থাকায় শরীরের ঘাম সহজেই শুকচ্ছে না।
লিগ্যাল নোটিশে আরও বলা হয়েছে পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের ছুটি শেষে ২১ এপ্রিল স্কুল–কলেজ খোলার কথা থাকলেও দেশজুড়ে হিট অ্যালার্ট ও তাপপ্রবাহের কারণে তা এক সপ্তাহ পিছিয়ে যায়। তীব্র তাপপ্রবাহ আর হিট অ্যালার্টের মধ্যেই গত ২৮ এপ্রিল স্কুল-কলেজ চালু হয়। তবে প্রচণ্ড গরমে বিভিন্ন স্থানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পাওয়া যায়। গরমে অসুস্থ হয়ে শিক্ষকসহ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন গত সোমবার হাইকোর্টের নজরে আনা হয়। এরপর শুনানি নিয়ে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে চলমান তাপপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়।
অথচ শিক্ষামন্ত্রী বিভিন্ন গণমাধ্যমে আরও বলেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাংবিধানিক এখতিয়ার আছে, সেখানে এ বিষয়ে যদি কোনো সিদ্ধান্ত (আদালতে) হয়ে থাকে তবে অবশ্যই আমরা তার উপরের আদালতে, আপিল বিভাগে যাব। একটু আগে শুনেছি, আদালত একটা নির্দেশ দিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী হাইকোর্ট জনদুর্ভোগ বিবেচনায় কোনো আদেশ দিলেই কথায় কথায় আপিল বিভাগে চলে যান এবং সেখানে উন্নত দেশের বিভিন্ন উদাহরণ অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। অথচ একেক দেশের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় সেই দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং পরিবেশ পরিস্থিতি অনুসারে। এটি কি শিক্ষামন্ত্রী আসলে বুঝতে চান না, নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করেন? আমেরিকা, কানাডা, ইউকে, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত দেশগুলোতে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পার্টটাইম কাজ করে নিজের গাড়ি, বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সম্পন্ন করার আগেই করে ফেলে। তাদের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে, সব শিক্ষার্থী ভাতা পান, অনলাইন ও অফলাইন দুই ব্যবস্থাতেই শিক্ষা নেয়ার সুযোগ আছে। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই পড়া শেষ করার পাশাপাশি পরীক্ষাও নেয়া হয় ওপেন বুক পদ্ধতিতে। উন্নত দেশগুলোতে কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষা দেয়া হয় ফলে কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবন শেষ করে বেকার থাকে না। উন্নত দেশগুলোর আবহাওয়াও আমাদের দেশের মতো নয় এবং উন্নত দেশগুলোর কোনো শিক্ষা কারিকুলাম ও সুবিধা বাংলাদেশে বিদ্যমান নেই। তাই কথায় কথায় আপিল করার অভ্যাস আর উন্নত দেশের উদাহরণ দেওয়া বন্ধ করে স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট এডুকেশন কীভাবে চালু করা যায়, কীভাবে স্কুল-কলেজে থাকতেই উন্নত দেশের বাচ্চাদের মতো বাংলাদেশের বাচ্চারাও আয় করতে পারে সেই রকম শিক্ষা কার্যক্রম চালু করুন।