গরমকালে শরীর ঠান্ডা রাখতে যেমন লেবু শরবত উপকারী ঠিক তেমন শীতের দিনেও শরীর গরম রাখতে পারে বিশেষ কিছু খাবার। এসব খাবার শরীরকে ভেতর থেকে গরম রাখবে। আসুন দেখে নেওয়া যাক এই সময়ে কোন কোন খাবার শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করবে।
গরম ভাত, ডাল ও রুটির সঙ্গে সামান্য দেশি ঘি মিশিয়ে খেলেই উষ্ণ থাকে শরীর। পিত্তের সমস্যা মেটাতেও কাজে আসে দেশি ঘি।
গবেষণা বলছে, শীতের সময়ে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে কমে যায় । সেক্ষেত্রে খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন খাঁটি ঘি। রুটি বা ভাতের সঙ্গে, অল্প পরিমাণ ঘি খেলে এই কনকনে শীতে শরীর গরম হবে । তবে ওবেসিটি, ডায়াবেটিস থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঘি খাওয়া উচিত।
শীতকালে শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে হলুদও। তরকারিতে হলুদ ব্যবহার করার পাশাপাশি রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে হলুদ মেশানো দুধ খেলেও তা শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে।
শীতকালে শালগম, বীট, রাঙালু ও গাজরের মতো শাকসবজির স্যুপ তৈরি করে খেতে পারেন। অথবা এগুলি রোস্ট করে খেলে শরীর শীতকালে উষ্ণ থাকে।
শীত কমাতে ঘন ঘন কফিতে চুমুক না দিয়ে বরং আদা, তুলসি দিয়ে ফোটানো চা খান। এতে শরীরে যেমন আরাম পাবে, তেমনি শরীর গরম রাখতেও সাহায্য করবে।
শীতকালে শরীর গরম রাখতে শুকনো ফল অনেক কার্যকরী। এপ্রিকট, শুকনো ডুমুর, খেজুর, বাদাম ও কাজুর মতন শুকনো ফল আপনার শরীরকে উষ্ণ রাখার পাশাপাশি এবং শীতকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। কারণ এগুলি প্রাকৃতিকভাবে পুষ্টি, ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন ইত্যাদিতে সমৃদ্ধ।
দিনে কয়েকটা খেঁজুর খাওয়ার অভ্যাস শরীরকে উষ্ণ রাখতে খুবই কার্যকরী।
শীতে শরীর গরম রাখতে কাঠবাদাম, কাজুবাদামসহ বিভিন্ন ধরনের বাদাম চর্বির বিশেষ উৎস। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ও শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে এসব খাবার।
আদা শরীরের তাপ বাড়াতে সাহায্য করার পাশাপাশি শীতকালে হওয়া সর্দি-কাশি কমাতেও সাহায্য করে। বৃদ্ধি করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। সাহায্য করে হজম ক্ষমতা বাড়াতে এবং রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করতে। এর জন্য অনেকে গরম জলে আদা মিশিয়ে খাওয়ার পাশাপাশি আদা দেওয়া চা-ও খান।
ডিমে থাকা প্রোটিন ও ভিটামিন শরীরকে উষ্ণ করে তুলতে পারে। এই খাবারকে বলা হয় ‘শক্তির পাওয়ার হাউস’। এই শীতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যোগ করতে পারেন এই খাবার।
চিনে শরীরকে উষ্ণ রাখতে পেঁয়াজের ব্যবহার প্রাচীন কাল থেকেই হয়ে আসছে। এটিকে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচতে চিনে পেঁয়াজকে ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। আপনি পেঁয়াজকে রোজকার খাদ্য তালিকায় রাখার পাশাপাশি স্যুপে মিশিয়ে বা সালাদেও ব্যবহার করতে পারেন।
শীতকালে শরীর গরম রাখার জন্য অনেকে তরকারিতে সর্ষে দেওয়ার পাশাপাশি গরম ভাতে কাঁচা সর্ষে বাটাও খান। এর ফলে খাবার সুস্বাদু লাগার পাশাপাশি শরীরের উষ্ণতাও বৃদ্ধি পায়। অনেকে স্নানের সময় শরীরে সর্ষের তেল মাখার পাশাপাশি পায়ের তলা ও হাতে তালুতে সর্ষের তেল মালিশ করেন। এতে শরীর উষ্ণ থাকে।
ঠাণ্ডার প্রকোপ থেকে বাঁচতে শীতকালে মধুর সঙ্গে তুলসি পাতা খান অনেকে। এতে সর্দি-কাশির প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। বাড়ে হজম ক্ষমতাও। ভালো রাখে ত্বকও।
শীতকালে শরীর ভেতর থেকে উষ্ণ রাখার জন্য কলা খেতে পারেন। এই ফলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং বি ভিটামিন আপনার থাইরয়েড এবং অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিকে দারুণভাবে সচল রাখে। আর এই গ্রন্থিগুলো শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। বিশেষ করে ঠান্ডা আবহাওয়ায় আপনার সকালের খাবারে কলা রাখতে পারেন। আর বিকেলে নাস্তা হিসেবে বাদাম ও মাখনের সাথে কলা খেতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, কলা এমন একটি খাবার যা শরীরের তাপ বাড়ায়।
শীতকালে শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে গুড়। এটি শরীরের হজম ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। দূর করে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও। খাবার পর অল্প পরিমাণে খেলেই এর কাজ বোঝা যায়।
শীতকালে পিপাসা না পেলেও শরীরে কিন্তু পানির চাহিদা রয়ে যায় আগের মতোই। শরীরে বিপাকক্রিয়া কার্যক্রম এবং কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি গ্রহণের প্রয়োজন। কম পরিমাণে পানি গ্রহণ করলে ইউরিন ইনফেকশন কিংবা শরীর ডিহাইড্রেট হতে পারে। শরীরে ডিহাইড্রেশন বা পানিস্বল্পতা হলে ত্বক ও চুল শুষ্ক হয়ে অতিরিক্ত চুল পড়তে থাকে। সুস্থ ত্বক ও সুস্থ চুল পেতে হলে পানি পান করতে হবে।
আপনি জেনে অবাক হতে পারেন যে মরিচ বা মরিচের মতো মশলাদার খাবার শরীরের তাপ বাড়ায় না। কিন্তু খাওয়ার সময় গরম অনুভব হতে পারে। এদিকে জিরা একটি মশলাদার ভেষজ যা নিয়মের ব্যতিক্রম। এটি মরিচ বা মরিচের মতো তীব্র মশলা নয় কিন্তু আপনার খাবারে জিরা যোগ করলে ধীরে ধীরে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।