মো. লোকমান হেকিমঃঃশীতের হরেক রকম শাকের উপকারিতা ।গাঁও গ্রামে এমনকি শহরেও মেহমানদের খাবার পরিবেশনায় শাক থাকে না। কারণ বিবিধ। তবে অন্যতম কারণ হলো শাক গরিবের খাদ্য। তাই মনে করা হয়। কিন্তু ধারণাটা যে ভুল তা অনেকে জানে না। অনেকে অস্বীকার করেন। শাক অতি সহজ লভ্য। দামে সস্তা। আর আমাদের বিত্তবানদের কাছে সস্তা জিনিসের কদর নেই। অথচ শাক অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ ও উপকারী।
আমরা এই পুষ্টিকর শাক ছেড়ে পোলাও, বিরিয়ানি ও তেহারি খেয়ে উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা ও পেটের পীড়ায় ভুগি। তারা যখন এসব রোগের শিকার হয়ে ডাক্তারের কাছে যান, ডাক্তার ওইসব খাবার বর্জন করে শাকসবজি খেতে বলেন।
তত দিনে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। অথচ বিভিন্ন শাক মুখরোচক আবার উপকারী। লাউশাক ছোট মাছ দিয়ে রান্না করলে দারুণ মজাহয়। থানকুনি ভর্তা করলে ভাতের সাথে খুবই মুখরোচক হয়। বিভিন্ন প্রকার শাক শরীরের রক্ত, রস, মাংস মেদ মজ্জা, অস্থি ও বীর্য পোষক। আয়ুর্বেদ ও হেকিমদের মতে, এক এক শাকে এক এক গুণ। এই গুণা গুণ জানা থাকলে আমরা শাক খেয়ে অনেক রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারি। এসব শাক দামেও তুলনা মূলক সস্তা। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। শীতের মওসুমে আমরা হরেক রকম শাকের সমারোহ দেখি।
আসুন এসব শাকের উপকারিতা জেনে নেই,,,,
লালশাক- লালশাক অতিসহজ লভ্য। প্র্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। নিজেরা ছাদে টবে বাসামান্য ৬ ইঞ্চি উঁচু মাটিতে লালশাকের বীজ ছাড়িয়ে পনের-বিশ দিনের মধ্যে লালশাক পেতে পারি। লাল শাক আমাদের শরীরের রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে যারা এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায় ভুগছে তারা নিয়মিত লাল শাক খেলে রক্তস্বল্পতা ও রক্তে হিমোগ্লোবিন পূরণ করেতে পারেন।
পালংশাক- পালংশাককে শাকের রাজা বলা হয়। এর পুষ্টি গুণের জন্যই রাজা বলা হয়। যাদের পিত্তথলি বাগলব্লাডারের ও কিডনি সমস্যা আছে তাদের নিয়মিত পালং শাক খাওয়া উচিত। এই শাকে জন্ডিস সারে। রক্ত পরিষ্কার করে। ডায়াবেটিস কমায়। পেটের অন্ত্রসচল রাখে। কিডনির পাথর গলাতে সাহায্য করে। পালংশাকে ভিটামিন এ, বি, সি ও ই রয়েছে। আরো রয়েছে অ্যামাইনো এসিড।পালংশাক পুঁটিমাছ দিয়ে রান্না করলে মুখরোচক হয়।
মুলাশাক- অনেকে বলেন, মুলার চেয়ে মুলাশাক বেশি উপকারী। বাজারে মুলাশাক এসে গেছে। দাম একটু বেশি। যারা অর্শ্ব রোগে ভুগছেন তারা দৈনিক একবার মুলাশাক খেলেউ পকার পাবেন। যাদের হাত-পা জ্বালাপোড়া করে তারাও মুলাশাক খেলে উপকার পাবেন। মুলা শাক কফ ও বাতনাশক। যারা কোষ্ঠ কাঠিন্যে ভুগছেন তারা মুলাশাক খাবেন। উপকার হবে।
লাউশাক-পুষ্টি বিদরা বলেন, লাউ অপেক্ষা লাউশাক বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ। আসলে লাউপাতা, ডগা ও লাউ সবই উপকারী। লাউশাক মায়ের বুকের দুধ বাড়ায়। অপুষ্টি দূর করে। মায়ের শরীরে শক্তি জোগায়। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। শরীরের ক্ষয় পূরণকরে।
কচুশাক- কচুশাককে সবাই হেলা ফেলা করে। অথচ কচুশাক অত্যন্ত ভিটামিন যুক্ত। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা চোখের জন্য কচুশাক খেতে বলেন। যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি আছে, তাদের কচুশাক খাওয়া উচিত। শহর-নগরে, গাঁও গ্রামে সর্বত্র কচুশাক পাওয়া যায়। গ্রামগঞ্জে কচুশাক কিনতে হয় না। যাদের প্রস্রাবেজ্বালা-যন্ত্রণা হয় তারা কচুশাক খেতে পারেন। উপকারহবে। কচুশাক মায়ের বুকের দুধবৃদ্ধি করে। এতে বেশি লৌহ আছে বিধায় মেয়েদের কচুশাক খাওয়া উচিত।
কলমিশাক- গাঁও গ্রামে খালবিলে পুকুরে সর্বত্র কলমিশাক হয়। কলমিশাকের ফুল মনোহরা। কলমি দুই প্রকার ডাঙা কলমি ও জলোকলমি। ডাঙা কলমিকে কোনো কোনো অঞ্চলে ঢোল কলমিও বলে। এই ডাঙা কলমি কেউ খায় না। জলো কলমি পুকুরে ও খালবিলে পানির ওপর লতিয়ে চলে। অনেকে স্বেচ্ছায় নিজ পুকুরে জলোকলমি লাগায়। এতে পুকুরের পানি নির্মল থাকে। মাছ এর শিকড় খায়। কলমিশাকের ক্রিয়া কিডনি ও মূত্রযন্ত্রের ওপর বেশি। যাদের ফোঁটায় ফোঁটায় সর্বক্ষণ প্রস্রাব পড়ছে, তারা কলমিশাক ভাজা বা রান্না করে খেলে উপকার পাবেন। ডায়াবেটিস রোগেও কলমিশাক উপকারী। মেয়েদের হিস্টিরিয়া রোগেও কলমিশাক উপকারী। পেট ও পিত্তঠাণ্ডা রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। মায়ের বুকে দুধ বাড়ায়।
পুইশাক-কথায় বলে, শাকের মধ্যে পুঁই, আর মাছের মধ্যে রুই। তবে পুঁইশাক সবাই হজম করতে পারে না, পেট গরম হয়। পুঁইশাকের পাতার চেয়ে ডগায় বেশি ভিটামিন। খেতেও ভালো। পুঁইশাক বল, বীর্য বর্ধকএবংপুষ্টিসমৃদ্ধ। পিত্তনাশক। পুঁইশাক দৈনিক এক বেলার বেশি না খাওয়া ভালো।
হেলেঞ্চাশাক- হেলেঞ্চাশাক ও কলমিশাক একই জাতের তবে হেলেঞ্চা শাক কলমিশাকের চেয়ে বেশি ভালো। হেলেঞ্চা শাকও খালবিল ও পুকুরে হয়। হেলেঞ্চাশাকও পিত্তনাশক এবং পেটঠাণ্ডারাখে। হেলেঞ্চা রক্ত পরিষ্কার করে। হজমে সহায়ক। ডায়াবেটিস রোগেওউপকারী। কবিরাজ ও বৈদ্যরা হেলেঞ্চাররস খেতে বলেন, যারা প্রমেহ বাডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে ভুগছে।