শাহেদুল ইসলামের বঙ্গবাজার মহানগরী কমপ্লেক্সে পাঁচটি ও আদর্শ মার্কেটে একটি দোকান ছিল । এক্সপোর্টের প্যান্ট, থ্রি-কোয়ার্টার, টু-কোয়ার্টার বিক্রি করে ভালোই চলছিল তার দিন৷ অভাব অনটন ছিল না সংসারে।
কিন্তু হঠাৎ লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে তার জীবন।
বঙ্গবাজারে লাগা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে শাহেদুলের ছয় ছয়টি দোকান। বাঁচাতে পারেননি সেসব দোকানের একটি সুতাও। শেষ সম্বল বলতে আছে শুধু বরিশাল প্লাজার গোডাউনে থাকা কিছু প্যান্ট। পেট চালাতে তাই সেসব প্যান্ট বিক্রি করতে রাস্তার পাশে বসেছেন তিনি।
শুধু শাহেদুল নয়, তার মতো আরো অনেক নিঃস্ব ব্যবসায়ী তাদের শেষ সম্বল নিয়ে রাস্তার পাশে বসেছেন। উদ্দেশ্য ঈদের আগে যতটুকু পারা যায় ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সদর দপ্তর ও পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজার মার্কেটের মধ্যবর্তী হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে রাস্তার ওপর প্লাস্টিক বিছিয়ে বিভিন্ন ধরনের পোশাক নিয়ে বসেছেন অন্তত ১২-১৫ জন ব্যবসায়ী৷ কেউ বিক্রি করছেন প্যান্ট, কেউ শার্ট, কেউবা পাঞ্জাবি। কেউ পোশাক এনেছেন বেঁচে যাওয়া গোডাউন থেকে, কেউবা নতুন করে কিনেছেন। একেকজন একেকভাবে বসলেও, তাদের সবারই দোকান পুড়েছে আগুনের লেলিহান শিখায়।
শাহেদুল ইসলাম সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহানগরী কমপ্লেক্সে তার ৪৯৩-৯৪, ৫৮৫-৮৬ ও ৬০১ নম্বর দোকান ছিল। আর আদর্শ মার্কেটে ছিল ৫০ নম্বর দোকান। সম্প্রতি আগুনে তার সবগুলো দোকান পুড়ে গেছে। সেই সঙ্গে পুড়েছে ৩০-৩৫ লাখ টাকার মালামাল। শুধু ফারিয়া ফ্যাশনেই (৬০১ নং দোকান) ছিল ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার প্যান্ট। সেই দোকানে ক্যাশে ছিল ৫৬ হাজার টাকা। আগুনে পুড়ে সব ছাই হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, একেকটি দোকানে ২ থেকে ৫ লাখ টাকার অ্যাডভান্স ছিল। মালামালের হিসাব আর কি বলবো। ঈদে ভালো ব্যবসা করবো ভেবেছিলাম। সেই স্বপ্ন এখন পুড়ে ছাই। রোজা রেখে যে ইফতার করবো সেই টাকাটাও এখন আর পকেটে নেই। ভাগ্যক্রমে আমার বরিশাল কমপ্লেক্সে থাকা গোডাউনের মালামাল বেঁচে গেছে। দোকান তো পুড়ে গেছে, তাই পেট চালাতে রাস্তার পাশে প্যান্ট বিক্রি করতে বসেছি। যদি কিছু বেচাকেনা করে খাওয়া-দাওয়া আর বাসা ভাড়ার ব্যবস্থা করা যায় সেই আশায়।
আরেক ব্যবসায়ী মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমার বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের গুলিস্তান ইউনিটে ১৩৭৮-৭৯ নম্বর দোকান ছিল। আগুনে সব পুড়ে শেষ। এখন পেটের দায়ে পরিচিত কারখানা থেকে পাঞ্জাবি এনে এখানে রাস্তার ওপর বিক্রি করছি। আগে যেখানে প্রতিদিন ৪-৫ লাখ টাকা পাঞ্জাবি বিক্রি করতাম এখন সেখানে ৫০ হাজারও করতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২০ হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারিনি।
সিলেটের জিন্দা বাজার থেকে পাঞ্জাবি কিনতে আসা দেলোয়ার নামের এক ক্রেতা বলেন, এলাকায় আমার পাঞ্জাবির দোকান আছে। বঙ্গবাজার থেকেই আমি সব সময় পাঞ্জাবি কিনি। তাই ব্যবসায়ীদের কাছ এখনো যেসব পাঞ্জাবি আছে সেগুলোই কিনতে এসেছি।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা আরেক ক্রেতা সবুজ মোল্লা বলেন, এ সময় আমাদের এসব ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানো দরকার। তারা যাতে তাদের ক্রেতা না হারান। আমরা সবসময় তাদের কাছ থেকে পোশাক কিনতাম। তাই এখনো তাদের সঙ্গে কথা বলে নিজের দোকানের জন্য প্যান্ট কিনতে এসেছি।