সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সিলেট জেলা কমিটির উদ্যোগে ‘সংঘাত-সহিংসতা নয়, চাই শান্তি, সম্প্রীতি ও সমঝোতা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) রাতে নগরীর মীর্জাজাঙ্গালস্থ হোটেল নির্ভানা ইনের হলরুমে সিলেটের প্রগতিশীল রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, অসাম্প্রদায়িকতার চিন্তা থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয় ঘটে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে ব্রিটিস সাম্রাজ্যবাদের বিরোধী লড়াইয়ের পথ বেয়ে বায়ান্নের মাতৃভাষা বাংলা প্রতিষ্টার দাবীতে গড়ে উঠা জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও পরবর্তীতে পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা তীব্র গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বাষট্টির শিক্ষা, ছেষট্টির ছয় দফাও পরবর্তীতে ছাত্র সমাজের এগার দফা তা উনষত্তর এর ছাত্র -গণ অভ্যুত্থান ও একাত্তর মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ তাজাপ্রানের বিনিময় ও তিল লক্ষের অধিক নরীর আত্নমর্যাদার গ্লানিময় বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্রের অবসানের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।মূলত পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বৈষম্য, শোষণ, নিপীড়ন, বিমাতা সূলভ আচরণের বিরুদ্ধে সেদিন সাড়ে সাতকোটি মানুষ জেগে উঠে তীব্র প্রতিবাদে।বাংলার প্রতিটি জনপদ স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রকম্পিত হয়ে উঠে। আজকের বাংলাদেশ সেই দিনের ত্রিশ লক্ষ বীরের উত্তরাধিকার বহন করে চলেছে এই কথা সকলের স্মরণ করতে হবে। আমরা একটি জটিল সময় পার করছি। মূলত পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের অবসান হলেও এখনো তাদের পাচাটা দালাল,লুটেরা, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ও দেশীয় এবং বিদেশি চক্র স্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এই অপশক্তি এখন সমাজের সর্বস্তরে দৃঢ়মূল অবস্থান নিয়েছে। এদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে, জনগণের ঐক্য গড়তে হবে। স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় জাতির পিতার হতয়ার পর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি পূর্ণঃজীবিত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত রাজনীতির চোরাবালিতে দেশে সাম্প্রদায়িকতা, দূর্নীতি, লুটেরা দালালচক্র ও সূবিধাবাদের তোষামোদ ও প্রতিষ্ঠা চলে আসছে। মূলত গণতান্ত্রের ফেরিওয়ালার ভূমিকা নিয়ে দেশ বিরোধী চক্র প্রতিনিয়ত সামপ্রদায়িক ও সম্প্রসারনবাদকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় চেতনাকে বিসর্জন দিয়েছে বিগত সময়গুলোতে। ফলশ্রুতিতে দেশে এখন সামপ্রদায়িকগোষ্ঠী ও তাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গডফাদারদের অপশাসন প্রতিষ্টার পটভূমি আবারও রচনার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা। একদিকে মানুষ অসহায়, কর্মহীন, দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধির সাথে ক্ষমতায় যাওয়া আসার প্রশ্নে উন্মাদনায় জর্জরিত অন্যদিকে হিংস্রতা আর বর্বরতার কষাঘাত। এগুলো হলো গণতন্ত্রের নামে নৈরাজ্য। আমরা মানুষকে জিম্মি করার রাজনীতির সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে, সবাইকে নিয়ে কথা বলে জাতীয় সংকট নিরসনের তাগিদ দিচ্ছি। সংবিধানের শাসনের ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে ত্যাগ স্বীকার করার আহবান রাখছি।আমরা সুস্পষ্ট বলতে চাই দেশকে মুক্তি যুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারার ফিরিয়ে আনতে হব। এই দেশটি হবে বহুত্ববাদী বহু ধর্ম,বর্ণ,গোত্রের আদর্শিক চিন্তার সমাহারে।রাজনীতি ও নির্বাচনে পেশীতন্ত্র, মাফিয়া, লুটেরা, ধর্মান্ধতার স্থান থাকতে পারবেনা। দেশের সকল মানুষের সমান অধিকার রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক মতাদর্শের উধ্বে উঠে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করবেন। নির্বাচন আসলে সমাজের দূর্বল মানুষগুলো বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের উপর নানান হুমকি, নিপীড়ন অতীতে নেমে এসেছে, সম্প্রীতি বিনষ্ট করে অনেকে ফায়দা লুটেছেন। দেশে সম্প্রীতি বিনষ্টকারী দুষ্ট চক্রকে কঠোরভাবে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সিলেট এর আহবায়ক হিমাংশু মিত্র এর সভাপতিত্বে ও ফাতেমা সুলতানা এবং নাফিজা শবনম এর যৌথ পরিচালনায় মতবিনিয় সভায় বক্তব্য রাখেন, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, ওয়াকার্স পার্টি সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক দীনবন্ধু পাল, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য সালেহ আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক দেবব্রত রায় দীপন, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি রজত কান্তি গুপ্ত।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ওয়াকার্স পার্টি সিলেট জেলা শাখার সভাপতি কমরেড সিকান্দর আলী, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের আহ্বায়ক আবু জাফর, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ জেলা সভাপতি সিরাজ আহমদ, তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটির অনিতা দাশ গুপ্ত, রিপন রিচিল, সিলেট জেলা শাখার সদস্য সচিব এম এস এ মাসুম খান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইউসুফ আহমেদ। অন্যান্যের আরো উপস্থিত ছিলেন, ডা. হরিধান দাশ, হাসনা বেগম, পারভীন আক্তার লিজা, ফাহিমা বেগম, এনামুল হক, দেবদ্যূত প্রণমী, শামীমা আক্তার, হেলাল আহমদ, আব্দুল্লাহ আল খোন, এস এম মিজান প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি